‘আমরা সর্বদা ভালো কাজ ও মানুষের উপকার করবো। কখনো কারো ক্ষতি করবো না’। এটুকু পড়েই থেমে গেলো ইয়ামিন। ক্লাসে পড়া শুনছিলেন শিক্ষক। একজন, দু’জন করে ইয়ামিনের পালা এলো এবার। ইয়ামিন এই লাইনে এসেই থেমে গেলো এবং শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলো- স্যার! ভালো কাজ করা আর কারো ক্ষতি করা থেকে বেঁচে থাকা যায় কিভাবে?
ইয়ামিনের প্রশ্নে শিক্ষক খুশি হলেন। বললেন- সুন্দর প্রশ্ন করেছো। এবার শোন, আমরা প্রতিদিন কত্তো কিছু করে ফেলি! কিন্তু কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ- তার বাছবিচার করি না। কিংবা আমার দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হলো কি না, সেদিকেও লক্ষ করি না। একটু সচেতন হলেই আমাদের দ্বারা অনেক ভালোকাজ ও মানুষের উপকার করা সম্ভব। এই যেমন ধরো, তুমি রিকশা থেকে নামলে। পাশাপাশি আরো একটি রিক্সার যাত্রীও নামলো। ১০০টাকার একটি নোট দিলো চালককে। কিন্তু চালকের কাছে ভাংতি নেই। তোমার কাছে আছে। এ সময় তাকে যদি তুমি ভাংতি টাকা দিয়ে সহায়তা করো- তবে চালকের বড় উপকার হবে। এবং সে খুশি হবে। কাজটি ছোট মনে হলেও, তুমি ঠিকই বিরাট সওয়াবের অধিকারী হবে। এমন অনেক ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই আমরা মানুষের উপকার করতে পারি। পেতে পারি বড় সওয়াব।
এবার আসি মানুষের ক্ষতি করা থেকে বাঁচার বিষয়ে… এটুকু বলতেই ঘণ্টা পড়ে গেলো। ছুটি হয়ে গেলো স্কুল।
২.
নতুন বিষয় শিখতে পেরে খুশি লাগছে ইয়ামিনের। ছোট্ট কাজ করেই মানুষের উপকার করা যায়! কথাটি বেশ মনে ধরেছে তার। হেঁটে হেঁটে স্কুল ভ্যানের দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একটি ইটের সাথে পা লেগে পড়ে গেলো সে। খানিকটা ব্যথাও পেলো। কিন্তু অন্য কেও যেনো হোঁচট খেয়ে না পড়ে সেজন্য ইটটি সরিয়ে ফেললো রাস্তা থেকে।
৩.
প্রচণ্ড রোদ পড়েছে। তাপের প্রখরতা গা জ্বালিয়ে দেয়। ভ্যানচালক ছুটে চলেছেন আপন গতিতে। কিন্তু তার গেঞ্জিটা ঘামে ভিজে গেছে। টপটপ করে ঘাম ঝরছে তার কপাল বেয়ে। ক্লান্তি আর পরিশ্রমে নেতিয়ে যাচ্ছে চালকের দেহটা। ইয়ামিন বলল- চাচা! ভ্যানটা থামান। এই নিন টিস্যু। ঘামটা মুছুন। আর পানির বোতলটাও নিন। পানি পান করুন।
মুছকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো ভ্যানওয়ালার মুখে। খানিক জিরিয়ে আবার ভ্যান চালাতে শুরু করলো।
৪.
মেইনরোড। বিরামহীন ছুটে চলছে বড় বড় গাড়িগুলো। এক বৃদ্ধমহিলা দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির ভিড়ে রাস্তা পাড় হতে পারছে না। ভ্যান থামাতে বললো ইয়ামিন। নেমে গেলো বৃদ্ধার কাছে। রাস্তা পাড় করে দিলো বৃদ্ধাকে। আনন্দে অশ্রুসজল চোখে বৃদ্ধা বললেন-‘আল্লাহ তোমারে বড় বানাক মা’।
৫.
ভ্যান চলতে চলতে বাসার সামনে এলো। ইয়ামিন বাসায় গেলো। রাতে হঠাৎ মনে পড়লো শিক্ষকের কথাটি- ‘ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই মানুষের উপকার করা যায়’। তখন ভাবতে লাগলো, সারাদিনের কৃতকর্মগুলো।
বুঝতে পারলো- ‘ছোট ছোট কাজের দ্বারা মানুষের উপকার করা যায় সত্যই’।
