অল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফা অর্জন

অল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফা অর্জন

হুজুর আকরাম সা.-এর জামাতা সায়্যিদিনা হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রাযি. একবার তিনি ও তাঁর পরিবার তিনদিন যাবৎ অনাহারে দিন কাটাতেছিলেন। ঘরে খাবার মত কিছুই ছিল না। আর কোন দিরহামও ছিল না যা দিয়ে যব ক্রয় করবেন। তাদের কলিজার টুকরা দু’সন্তান- হযরত হাসান রাযি. ও হযরত হুসাইন রাযি. ক্ষুধার যন্ত্রণায় বেহুশ হয়ে যাবার উপক্রম। এমতাবস্থায় হযরত আলী রাযি.-এর স্ত্রী সাইয়্যেদা হযরত ফাতিমা রাযি. তার একটি রেশমী চাদর আলী রাযি.-এর নিকট দিলেন এবং বললেন- এ চাদরটি বিক্রি করে তার অর্থ নিয়ে আসবেন। দেখবেন এটা কত মূল্যে বিক্রি করা যায়। হযরত আলী রাযি. বাজারে গেলেন এবং চাদরটি ক্রয় করার জন্য একজন গ্রাহকও পেয়ে গেলেন। লোকটি ছয় দিরহাম দিতে রাজি হলো। আলী রাযি. আর জোর করলেন না, ছয় দিরহামেই চাদরটি বিক্রি করে দিলেন। এবার এই ছয় দিরহাম নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। কিছুদূর যেতেই একভিক্ষুক হাত পেতে বসল। বলল: আলী! কিছু দিবেন; খুব অসহায় আছি।

হাত পেতেছে তো পেতেছে তাও আবার আলী রাযি.-এর কাছে। আর ভিক্ষুক বুঝেই হাত পেতেছে যে আলী তো খালি হাতে ফেরৎ দিবেন না। আলী রাযি. একটু সময় থামলেন এবং ভাবলেন, তারপর ভিক্ষুককে পুরো ছয় দিরহামই দিয়ে দিলেন। এবার খালি হাতে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলেন আর ভাবতে লাগলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার কাছে এর প্রতিদান অনেক বেশি। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা হল। ব্যবসায়ী বাজারের দিকে যাচ্ছে উট বিক্রি করার জন্য। আলী রাযি.কে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, আলী! কিনবে? একশত দিরহাম! বাকী চাইলেও দিব। আলী রাযি. রাজি হলেন এবং বাকীতেই উটটি কিনে নিলেন। এরপর উটের রশি ধরে বাড়ির দিকেই যাচ্ছেন। কিছুপথ অতিক্রম করার পর আবার এক পথিকের সাথে দেখা হল। আলী রাযি.কে লক্ষ্য করে পথিক বলল- আলী! আমাকে উটটি দেবে? সাতশত দিরহাম দিব। আলী রাযি. সাতশত দিরহামে উটটি বেচে দিলেন। এর একটু পরেই উট বিক্রেতা দৌড়ে আলী রাযি.-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আলী! উটটি বিক্রি করে দিয়েছেন?
আলী রাযি. বললেন, জ্বী!

লোকটি বলল, তাহলে আমার একশত দিরহাম দিয়ে দিন।
আলী রাযি. লোকটির পাওনা পরিশোধ করলেন। এখন তিনি প্রফুল্লচিত্তে বাড়ির দিকে ফিরছেন। আজ খুব খুশি লাগছে তাকে। ঘরে ফিরে সাইয়্যেদা ফাতিমা রাযি.-এর কাছে বললেন: ফাতিমা! আজ আল্লাহর সাথে বিরাট একব্যবসা করেছি। এরপর তিনি ছয়শত দিরহাম ফাতিমা রাযি.-এর হাতে তুলে দিলেন। ফাতিমা রাযি. ছয়শত দিরহাম দেখে খুব অবাক হলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আমার চাদরের মূল্য তো এত হবার কথা নয় কখনও। তাহলে এতগুলো দিরহামের রহস্য কি, বলবেন?

আলী রাযি. ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ফাতিমা রাযি.-এর কাছে বর্ণনা করলেন। এরপর বললেন, তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে বলে আসি। এরপর হুজুর সা.-এর কাছে সব বর্ণনা করলেন। সব শুনে হুজুর পাক সা. বললেন, আলী! জানো ঐ উট বিক্রেতা কে?
আলী রাযি. বললেন, আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক। আপনিই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল সা.!

এরপর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, শোন আলী! তোমার নিকট ব্যবসায়ীর বেশে যে উট বিক্রেতা ছিলেন, তিনি হযরত জিবরাঈল আ. আর তোমার নিকট থেকে উট ক্রয়কারী ঐ পথিক ছিলেন হযরত মিকাঈল আ.। আরেকটি কথা তুমি মনে রেখ- ঐ উটটি সেই উট, যেই উটের পিঠে বেহেশতে হযরত ফাতিমা রাযি. সওয়ার হবেন।

আসুন! আমরাও এভাবে দানের হাতকে বাড়িয়ে দেই এবং অল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফা অর্জন করি, যেভাবে আলী রাযি. ছয় দিরহাম দ্বারা ছয়শত দিরহাম ব্যবসা করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সহায় হোন, আমীন!

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

দুঃখিত! এই বিভাগের অন্য কোনো পোস্ট নেই।