ব্যস্ততা ছিলো ঢের। তারচে বেশি আগ্রহী ছিলাম কবে দশ ডিসেম্বর আসবে। সবকিছু ডিঙ্গিয়ে চলে আসলো দশ ডিসেম্বর। সকাল থেকেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অডিটরিয়ামে ছিলো তুমুল ব্যস্ততা। সাউন্ডসিস্টেম এলইডি ডিসপ্লে লাইটিং-এর কাজ চলছে সকাল ৯টা থেকে।
মঞ্চে ককসীটে ব্যানার সাজানোর ব্যস্ততাও কম না। চারদিকে শত আয়োজন- অফিসে চলছে বিজয়ী বন্ধুদের পুরস্কার প্যাকেটিং। পথে-ঘাটে একটা সাজ সাজ রব। অডিটরিয়াম সেজে উঠছে ফুলে ফুলে, রঙে রঙে-
বন্ধুরা আসবে!
আসবে প্রিয়রা!
আসবে আগামীর স্বপ্নরা!
তাই বুঝি এতো আয়োজন!! নকীব তার বন্ধুদের বরণ করে নিতে সাজিয়ে দিচ্ছে সব কিছু। আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে মঞ্চ এবং অডিয়েন্স।
দুুপুর দু’টায় আমরা গলদঘর্ম!
-ততক্ষণে চলে এসেছে নকীবের শত শত বন্ধু, হলরুমের চেয়ারগুলো অলংকৃত হচ্ছে বন্ধুদের দিয়ে। শত ইচ্ছারপরও অনুষ্ঠান শুরু হতে একটু দেরি হয়েই গেল।
নকীব পরিবারের সদস্য জামাল উদ্দিন খালিদের কুরআন তিলায়াতের মাধ্যমে শুরু হলো অনুষ্ঠান- আনন্দঘন পরিবেশে নকীব সংগীত পরিবেশন করলেন বিশিষ্ট শিল্পী ও সুরকার সাইফ মুহাম্মাদ সালমান।
তারায় তারায় ভরপুর-মুক্তিযোদ্ধা হল। এরইমধ্যে অনুষ্ঠানে চলে এসেছেন আমাদের রাহবার, সকলের শ্রদ্ধাভাজন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, চলে আসলেন সকলের প্রিয় মুখ, সাহিত্যের দিকপাল মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীন। চলে এসেছেন প্রিয়দের প্রিয় শাহ ইফতিখার তারিক, অনুষ্ঠান চলছে-নকীবের আলোচনায় মুখরিত চারদিক, আলোচনা চলছে সত্য ও সুন্দরের, আলোচনা চলছে স্বপ্ন নিয়ে, স্বপ্ন বন্ধুদের নিয়ে। শিশুদের নিরাপদ আগামী নিয়ে, নিরাপদ বাংলাদেশ নিয়ে।
৩০লক্ষ বাঙালির রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশ-স্বপ্নের বাংলাদেশ। শিশুরা যেন পথ না হারায়- দেশ যেন স্বপ্ন না হারায়। আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সা. যেভাবে মদীনা গড়ে ছিলেন- আঁধারের দুনিয়ায় যেভাবে আলো জ্বেলেছিলেন আমাদের শিশুরাও সেই আদর্শ লালন করবে, অন্ধকারে জ্বালবে আলোর দিপ্তী।
আলোচনার পরতে পরতে ছিলো নকীব, শিশু ও বাংলাদেশ।
হল রুম ছিলো আবছা আলো-আঁধারিতে ছাওয়া। একঝাক তারার মিলন মেলা-আলোচনায় আলোচনায় নকীব বন্ধুরা দেখতে থাকে স্বপ্ন, এক নতুন দিগন্তে প্রসারিত হতে থাকে তাদের স্বপ্নের ডালপালা।
মুগ্ধকর-নয়নাভিরাম এদৃশ্য কল্পনাকেও হার মানায়। প্রাণবন্ত উৎসবমূখর সকলরেই মন-প্রাণ। এমন সময় চলে আসলেন এক মহান সাধক! যিনি জাগতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার! যিনি বড়দের বন্ধু! আবার শিশু-কিশোরদেরও আপনজন, প্রিয়জন। বলতে পারো সব শিশুদের আস্থার ঠিকানা, তিনি মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই।
তার আগমনে উল্লসিত সকলের মন, তিনিই ছিলেন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি, প্রধান অতিথি- শায়েখ ধৈর্যধরে বসলেন, অনেক সময় দিলেন, আলোচনা শুনলেন- আলোচনা করলেন।
এমন আলোচনা! যে কথা শুনলে চোখ খুলে যায়, স্বপ্ন দেখা যায়, পাওয়া যায় জীবনের পরশমণি। তিনি কথা বললেন- ছোটদের মতো করে, পথ দেখালেন সহজ করে।
বললেন শিশুদের আদর্শের কথা- শিক্ষার কথা, তিনি বললেন- ছোটবেলার শিক্ষা পাথরের মাঝে অংকন করার ন্যায়, ছোটবেলা যে শিক্ষা-সংস্কৃতি অন্তরে বসবে তা কখনো বিস্মৃত হওয়া যায় না।
ছোটবেলা থেকে যে সংস্কৃতি দেখে দেখে বড় হবে তাই তার জীবনে প্রতিফলিত হবে। তাই শিশুদের আদর্শ শিক্ষা-দেশপ্রেম ও ইসলামী সংস্কৃতি শিক্ষাদানের ওপর জোর দিতে হবে।
তিনি যখন আলোচনা করেন তখন মিশেযান শ্রোতাদের সাথে, আজও তাই ঘটে গেল, তিনি মিশে গেলেন শিশুদের সাথে তাদের মতো তাদের পথ দেখালেন।
একটু দেরি হলেও চলে আসলেন দাদুমণি শিশু-কিশোরদের দাদুমণি- প্রিয় ছড়াকার মহিউদ্দিন আকবর। অনুষ্ঠানকে আলোকিত করতে চলে আসলেন শিশুসাহিত্যক ড. মুহাম্মাদ মুফতি গোলাম রব্বানী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের স্পন্সর রকমারি ডট কমের ইহসানুল হক, ছাত্রসেবা ব্রান্ডের তানভির হাসান।
অথিতিদের মধ্যে ছিলে আলহাজ আমিনুল ইসলাম, ড. আক্কাস আলী সরকার, এম ওবাযেদুর রহমান বিন মোস্তফা, রশিদ আহমাদ ফেরদৌসসহ অসংখ্য গুণীজন।
জাতীয় শিশু-কিশোর পত্রিকা নকীবের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি এম হাসিবুল ইসলাম তার আলোচনায় শিশুদের জাগিয়ে তুলেন, আশার কথা শুনান এবং নকীব থেকে শিশু-কিশোরদের জন্য সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কথা বলেন- নকীবের প্রধান সম্পাদক নূরুল করীম আকরাম, সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।
ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে, শীতের সন্ধ্যা অন্যরকম আমেজে মনোরম! মনকে প্রফুল্ল করতে চাই সুস্থ বিনোদন- নকীব সে আয়োজনও করেছিলো। সন্ধ্যায় শুরু হল জম্পেস সংগীতসন্ধ্যা।
ব্যতিক্রমি এ আয়োজনে দেশসেরা শিশু-কিশোর শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় বহুবিচিত্র ও হৃদয়গ্রাহী সংগীত।
আমরা নকীব আলোর পাখি আলোর মিছিলে ডাকি
আমরা অগ্রজ আমরা সেনানী জীবন স্বপ্ন আঁকি!
নকীবের এই নতুন থিমসং বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব-এর শিল্পীদের সুর ও কণ্ঠে এ ছিল অনুষ্ঠান সূচনার গান।
একে একে পরিবেশিত হয় হামদ, নাত ও দেশাত্মবোধক সংগীত। মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখা জাগরণী সংগীত গেয়ে আলোড়িত করে কলরব ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিল্পীবৃন্দ।
সুরেলা এ সন্ধ্যাকে আলোড়িত করে কলরব, ইকরা, আহবান, মানযিল ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির একঝাঁক শিশু-কিশোর শিল্পী।
ইস্পাহানী নকীব সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০২০-এ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও ‘সুরক্ষিত শিশু সুরক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সংগীত অনুষ্ঠান নকীব বন্ধুদের মনে অনেক দিন স্বপ্ন আর আশার দোলনায় দোল খাওয়াবে। সেই খুশির আমেজ শেষ না হোক- থাকুক সকলের হৃদয় জুড়ে, প্রাণ জুড়ে, মন জুড়ে।
আমরা আবারো আসবো ভিন্ন আয়োজন নিয়ে, আরো নতুনত্ব আরো সুন্দরের প্রত্যয়ে। আমরা শিশুদের গড়তে চাই ইসলামের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য। আমাদের প্রত্যয়- আমাদের স্বপ্ন- সুন্দর, নির্মল আগামী।
