সময়। বহতা নদীর মতো যার চলা। আমাদের বৈচিত্রময় এ জীবন সময়কে ঘিরেই। এই যে আমরা কর্মচঞ্চল পৃথিবীর বুকে চোখ মেলি, নিশুতিরাতে নিদ্রায় হারিয়ে যাই- এ সবই কিন্তু সময়কে কেন্দ্র করেই। সময় জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সময়ে রশি-কলেবাঁধা এই আমাদের জীবন। প্রবাহিত সময়ের যতটুকু আমরা পাই তা দিয়ে সাজাই আমাদের জীবন সংসার।
আমার নকীব বন্ধুদের বলছি! আমরা অনেকেই আমাদের জীবন সংসারে সময়ের মূল্য দেই না। জীবন গঠনের স্বর্ণকালে যাচ্ছেতাই সময় নষ্ট করি। ফলে আমাদের বাল্যবেলা, কৈশোরকাল ও তারুণ্যের মোহিতকাল দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর এভাবেই সম্ভাবনাময় আমাদের তারুণ্য হারিয়ে যায় কালের গর্তে।
সময়ের ব্যাপারে গর্বের ধন কুরআনের মর্মময় বাণী শোন: ‘সময়ের কসম! নিশ্চয় সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত তবে তারা নয়, যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের কথা বলে…’। (সুরা আসর:১-৩)।
সময় কতটা গুরুত্বপূর্ণ হলে মহান আল্লাহ সময়ের কসম কাটতে পারেন! আমাদের কুরআন আমাদের শিখায়- এ মানব জাতির ক্ষতিগ্রস্ততায় কতটা প্রভাব সময়ের। একটু চিন্তা করলে দেখা যায়, মানুষের আয়ুষ্কালের সাল, মাস, সপ্তাহ, দিবারাত্র, ঘণ্টা, মিনিট ও মুহূর্তই মানুষের জীবনের একমাত্র পুঁজি। যার সাহায্যে সে ইহকাল ও পরকালের বিরাট বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করতে পারে এবং এ সময়কে নষ্ট করে ভ্রান্ত পথে চললে সময়ই তার জন্য বিপদজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। (মারেফুল কুরআন)।
বন্ধুরা! এই যে সময় নিয়ে আমাদের ধর্মের উপলব্ধি- তা কিন্তু কোন ঠুনকো বিষয় নয়! ইতিহাসের বরিত ইমাম শাফিয়ী রহ. সময়কে কেন্দ্র করে নাজিল হওয়া এ সুরা সম্পর্কে বলেন, মানুষ এ সুরাাটিকে চিন্তা-ভাবনার সাথে পাঠ করলে তাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য যাথেষ্ট হয়ে যাবে। (মারেফুল কুরআন)।
আমাদের সমাজে সময় নিয়ে উপলব্ধির শেষ নেই। ইতিহাসের আরেক স্বর্ণ-তারকা হযরত হাসান বসরি রহ. বলেন, ‘হে মানুষ! তুমি তো দিনসমূহের সমষ্টি। একটি দিন চলে যাওয়ার অর্থ তোমার একটি অংশ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া’। অনেকে সময়ের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন প্রখর রোদের মধ্যে রাখা বরফখণ্ডের সাথে। যা কাজে না লাগালেও শেষ হয়ে যাবে।
আর আমাদের দেখা ও জানার পরিধিতে থাকা হাজার হাজার বরিত মনীষীগণ গলে যাওয়া এ বরফ খণ্ডকেই কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর কিংবদন্তি হয়েছেন। হয়েছেন তৎসময়ের নকীব।
বন্ধুরা আমার! আজ আমাদের সময় কাটে যতসব অর্নথক কাজে। ফেইসবুক থেকে শুরু করে নেটজগতের অলি-গলিতেই ঘুরে-ফিরেই আমাদের অনেকের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেখ, তুমি যদি ভালো কাজে সময়কে না কাটাও তাহলে সময় কিন্তু তোমাকে কেটে ফেলবে।
তাই এসো! আমাদের পূর্বসুরীদের মতো জীবন রাঙাতে, তাদের মতো জীবন গড়তে সময়ের কদর করি। সময়ের অবসরে জীবনের মালা গাঁথি। সময়ের মালাগাঁথি। সময় নষ্ট না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি সময়ের এ অবসরে। একুশের এ নতুন বছরে নব উদ্যোমে সময়কে কাজে লাগিয়ে ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণের চাষাবাদ করি।