কর্মের মাধ্যমেই মানুষের পরিণতি নির্ধারিত হয়। দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ-শান্তি সফলতা-ব্যর্থতা কর্মের উপরই নির্ভরশীল। সৎ কর্মশীলদের জীবন হয় আলোকিত ও সফল। পক্ষান্তরে অলস ও অসৎ কর্মশীলদের জীবন হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ব্যর্থ। পার্থিব জীবনের উন্নতি ও পরলৌকিক কল্যাণ কামনায় কাজের গুরুত্ব অপরিসিম। তাই ইসলাম কাজের প্রতি সমধিক গুরুত্বারোপ করেছেন এবং কর্মহীন অলস জীবন যাপনকে পাপ বলে গণ্য করেছেন।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষ তাই পায়, যা সে করে। অচিরেই তার কর্ম মূল্যায়ন করা হবে। তারপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করা হবে। (সূরা নাজম, আয়াত ৩৯-৪১)
মহান রাব্বুল আলামিন আরো ইরশাদ করেন, অতঃপর যখন নামায সমাপ্ত হবে, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক) অনুসন্ধান করো ও আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা জুমুআ, আয়াত ১০)
কাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী সা. ইরশাদ করেন, নিজ হাতে উপার্জনের চেয়ে উত্তম কোনো উপার্জন নেই। হযরত দাউদ আ. নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। (বুখারী)
প্রিয়নবী সা. আরো ইরশাদ করেন, হালাল রুজি উপার্জন করা ফরজের পর একটি ফরজ। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সা. নিজ পরিশ্রমের উপার্জনকে সর্বোত্তম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে নয়, বরং নিজ মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে হালাল রুজি অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করাই হলো ইসলামের অনুপম শিক্ষা। পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলগণও পরিশ্রম করে স্বহস্তে জীবিকা উপার্জন করতেন। হযরত আদম আ. হযরত শীষ আ. ও হযরত ইউনুস আ. চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হযরত ইদরিস আ.-এর পেশা ছিল কাপড়সেলাই করা। হযরত নুহ আ. ও হযরত জাকারিয়া আ. ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। মহাপ্লাবনের সময় হযরত নুহ আ. মহান আল্লাহর নির্দেশে সুবিশাল একটি নৌকা তৈরি করেছিলেন; যা ৩০০ হাত দীর্ঘ, ৫০ হাত প্রস্থ ও ৩০ হাত উচ্চতাসম্পন্ন ছিল।
হযরত দাউদ আ. রাজ্যের বাদশাহ হওয়া সত্বেও নিজে লৌহবর্ম বানিয়ে বিক্রয় করে জীবিকা উপার্জন করতেন এবং তার ছেলে হযরত সোলাইমান আ. সমগ্র পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন। হযরত ইবরাহীম আ. ও হযরত ইসমাঈল আ. এর পেশা ছিল ব্যবসা ও রাজমিস্ত্রি। তারা উভয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেন। হযরত ইউসুফ আ. রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। এ ছাড়াও হযরত সালেহ আ. ইয়াকুব আ. শোয়াইব আ. হযরত ইলিয়াস আ. হযরত মুসা আ. ও হযরত হারুন আ. পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
আর আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন বিচক্ষণ সৎ ও সফল ব্যবসায়ী। ঘর ঝাড়ু, কাপড় সেলাই, বকরির দুগ্ধ দোহনসহ ঘরের যাবতীয় কাজেও তিনি স্ত্রীগণকে সহযোগিতা করতেন।
বর্তমান সমাজের অন্যতম একটি সমস্যা হলো বেকারত্ব। শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ অধিকাংশ যুবক শিক্ষা সমাপন করে চাকরি পাওয়ার আশায় প্রহর গুনতে থাকে। অথচ তারা যদি চাকরির দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মানসে কাজ করে, তাহলে সমাজ থেকে অতি দ্রুত দারিদ্রতা ও বেকারত্ব হ্রাস পাবে ইনশাআল্লাহ। মহানবী সা. ইরশাদ করেন, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সঙ্গে। (আদ্দুররুল মানসুর)