রাত নয়টা বাজে। যাচ্ছি নানুর বাসায়। আসলে বৃহস্পতিবারে চট্টগ্রামের এই জায়গাতে এ সময়ে গাড়ি পাওয়া খুব সহজ নয়। গাড়ি পাওয়া যায় তবে সেই গাড়িতে উঠতে গেলে মনে হবে মহা এক প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। আপনি যদি শান্তশিষ্ট হয়ে এই গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকেন তবে নির্ঘাত আপনার সময় পার হবে, কিন্তু গাড়িতে চড়া হবে না। যা হোক, অনেক কষ্টে গাদাগাদি করে গাড়িতে উঠতে পাড়লাম। এত কষ্টে ওঠার পরে যে একটু আরাম করে বসবো, তার জো নেই। সে কি রাস্তারে বাবা! মনে হচ্ছে কোনো গিরিপথে গাড়ি চড়ছি। একপাশে ছয়জন করে বসলাম। আমার পাশে ছিল দুইজন কলেজ পড়ুয়া ছেলে। তাদের কিছু কথাবার্তা শুনে বুঝলাম অনেকদিন বাদে তারা একে অন্যকে দেখছে। তাদের মধ্যে খোশগল্প চলছে। এদিকে গাড়িও হেলেদুলে পথ গুনছে। ভাবছেন পথ আবার গোনে কেমন করে? হ্যাঁ ভাই, যেভাবে সিঁড়ি গোনেন সেভাবে এই পথটাকেও গোনা যায়। এবার বুঝলেন তো কেমন হাইওয়ে!
এই গাড়িতে বসে নড়াচড়া করার সুযোগটা পর্যন্ত নেই। ভাবলাম মোবাইলটা বের করে একটু ফেইসবুকে উঁকি দিই। কিন্তু সেই চান্সটুকু পেলাম না। এবার বসে বসে গাড়ির ঝাঁকুনি আর পাশে বসা দুই বন্ধুর কথা গিলা ছাড়া উপায় রইলো না। গাড়ি চলছে এঁকেবেঁকে ঝেঁকে ঝেঁকে। এদিকে আমি মনোযোগ দিলাম পাশে বসা দুই বন্ধুর কথায়। ইতিমধ্যে তাদের কথা খুব জমে উঠেছে। তাদের আরো কিছু কথা শুনে বুঝতে পারলাম তাদের মধ্যে আমার পাশে বসা বন্ধুটি কয়েক মাস হলো পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। তার নাকি পড়ালেখা করতে মন চাইছে না। তাই অপর বন্ধু তাকে নানানভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, পড়ালেখা ছাড়িস না। বন্ধুকে অনেক দারুণ দারুণ কথা বলছে যেন পড়ালেখা আবার শুরু করে। কিন্তু সে পড়বে না-ই পড়বে না। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে এভাবে উৎসাহ দেওয়াটা আমার খুব ভালো লাগছে। আসলে বন্ধু বলতে এমনটাই হওয়া চাই।
গাড়ি চলছে নৃত্য করে করে, এদিকে দুই বন্ধুর বোঝাপড়াও চলছে। শেষপর্যন্ত একটা কথা শুনে পাশের বন্ধুটি পড়ালেখা করতে রাজি হলো! সে কি, এত উত্তম উত্তম দিক তাকে বললো কিন্তু সে রাজি হলো না; এই হাসির কথাটাই তাকে রাজি করিয়ে ফেললো!! বাপ রে। কথাটা কিন্তু বেশ মজাদার ছিল- “দেখ বন্ধু! তুই তো চাস একজন শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করবি। কারণ তুইও যেহেতু শিক্ষিত। ধরে নে তোর বৌ হবে মাস্টার্স পাস আর তুই ইন্টার। বিষয়টা কেমন দাঁড়ালো? তোর বৌয়ে এবার তোকে তার কথায় উঠাবে আর বসাবে- বসাবে আর উঠাবে। বল্, তখন কেমন হবে?
পাল্টা উত্তরে পড়া ছেড়ে দেয়া বন্ধু বললো, আরে টাকা থাকলে এসব শিক্ষিত বৌয়েরা কিছুই করতে পারে না।
উৎসাহদাতা বন্ধু বললো, ভাই, এসব টাকাপয়সার পাওয়ার বৌয়ের কাছে চলে না। আরে তোর ঐ মামাটাকে তো দেখ্! এত পয়সা থাকার পরও বৌয়ের কথায় ওঠে আর বসে। এমনকি মা-বাবাকে পর্যন্ত পৃথক করে দিয়েছে।
এবার দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। এভাবে কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ আমার পাশে থাকা পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া বন্ধুটি বলে উঠলো- ‘আরে দোস্ত, আসলে তুই ঠিক বলেছিস, পড়ালেখার বিকল্প নেই। ঠিক আছে, সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাসে আসবো। এদিকে আমি তো হেসে খুন। অট্টহাসি বন্ধ করা যে কতটা কষ্টকর তা এখন বুঝলাম। ভাগ্যিস, মুখে মাস্ক ছিল। নতুবা নিজেও লজ্জা পেতাম তারাও পেতো। তারা কথাগুলো অবশ্য আস্তে আস্তে বলছিল কিন্তু ভাই আমি তো ‘তোয়া লিবুল ইলম’, তাই এমন লুকোচুরি কথাগুলো কান এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল।