ছাত্র মানে শিক্ষার্থী। যাকে বলে ত্বলিবুল ইলম। যেভাবেই বলি না কেন- আমাদের চিন্তায় একটাই অর্থ আসে তা হলো জ্ঞানপিপাসুু। নিজেকে শুদ্ধ-পরিশুদ্ধ করার জন্য জ্ঞান আহরণ করতে হয়। নিজেকে আলোকিত করার জন্য নিজের জীবনকে সুন্দর করার জন্য শিক্ষা অর্জন করতে হয়। যারা শিক্ষিত তারা শুধুমাত্র নিজেরা আলোকিত কথাটা এমন নয় বরং নিজেও যেমন আলোকিত তার কারণে সমাজ ও সমাজের আরো দশজন মানুষও আলোকিত হয়।
ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সত্যিকারের মানুষরূপে গড়ে তোলা। যে শিক্ষা আত্মপরিচয় দান করে, মানুষকে সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করে এবং পরোপকারী, কল্যাণকামী ও আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হতে সাহায্য করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে, অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত করে, দূরদর্শিতা সৃষ্টি করে। তাই আল্লাহ তা’আলা বাবা আদম আ.-কে সৃষ্টি করে প্রথমে তাঁর শিক্ষারব্যবস্থা করলেন। কুরআনের বর্ণনায়, ‘আর আল্লাহ তা’আলা আদমকে সকল বস্তুর পরিণতি শেখালেন।’
(সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩১)।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পৃথিবীতে আসেন তখন পৃথিবীতে কোন শিক্ষা ছিলো না। সে সময়কে বলা হতো আইয়্যামে জাহিলিয়াত। অন্ধকারাচ্ছন্ন এক সমাজ। মানুষে মানুষে ছিলো হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি-কাটাকাটি, গোত্রে-গোত্রে যুদ্ধ-বিগ্রহ। এমন যুদ্ধ যা বছরের পর বছর লেগেই থাকতো। কিন্তু এই যুদ্ধ বন্ধ করার বা মিমাংসা করার মতো মানুষ ছিলো না বললেই চলে। এর একমাত্র কারণ মানুষের মাঝে শিক্ষা ছিলো না। তারা বুঝতো না একতা কাকে বলে- সমাজ কাকে বলে।
সুন্দর-সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ কাকে বলে বা সে সমাজ কিভাবে গড়তে হয় তা জানতে হলে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। সেই অন্ধকার যুগে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আসেন।
তিনি তার অনুপম আদর্শ, চরিত্রের মাধুরতা দিয়ে প্রথমে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। অন্ধকার সমাজে চরিত্রহীন মানুষের ভিড়ে তিনি ছিলেন অনন্য, হাজারো পাপাচারের ভিড়ে নিজেকে রেখেছিলেন পবিত্র করে।
আমরা সেই নবীর উম্মত। আমাদের গড়ে উঠতে হবে নববী আদর্শে। জানতে হবে তার সীরাত। চলতে হবে তারই দেখানো পথে।
তুমি যদি সে পথে চলতে চাও, আলোকিত করতে চাও নিজেকে ও সমাজকে। তাহলে তোমাকে পড়তে হবে, পড়তে হবে এবং পেড়তে হবে। পড়ার বিকল্প নেই।
আল্লামা ইকবাল বলেন, “খুদি বা রূহের উন্নয়ন ঘটানোর প্রক্রিয়ার নামই শিক্ষা। শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের কাজ হলো পরিপূর্ণ মানবসত্তার লালন করে এমনভাবে গড়ে তোলা। যার এমন একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি যে, মানুষ তার দেহ, বুদ্ধিবৃত্তি এবং আত্মা তার বস্তুগত ও আত্মিক জীবন এবং পার্থিব জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপের কোনোটিই পরিত্যাগ করে না। আর কোনো একটির প্রতি অবহেলা বা মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকেও পড়ে না”।
পৃথিবীতে যারা সম্মানিত, যারা বড়, যারা মনিষী, যাদেরকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি- তারা সবাই পড়েছেন- নিজেকে গড়েছেন। চেষ্টা করেছেন জ্ঞানের মণিমুক্তা সংগ্রহে। তারপর তারা বড় হয়েছেন, আলোকিত হয়েছেন ও আলোকিত করেছেন।
আচ্ছা একটা উদাহরণ দেই। ঘরে কিছু প্রয়োজন। তুমি বাড়ির পাশের দোকানে যাবে কিছু কিনতে! তাহলে কিভাবে যাবে, বলবে আরে হেঁটেই যাই। যদি তা কিনতে একটু দূরে বাজারে যেতে হয় তাহলে ঘর থেকে নিশ্চয় বাইসাইকেল নিয়ে বের হবে। আর যদি আরো দূরে শহরে যেতে চাও তাহলে গাড়িতে উঠতে হবে।
তেমনি তুমি কত বড় হতে চাও! চিন্তা করো, স্থির করো তোমার লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করো। তুমি কি হতে চাও যুগের ইমাম আবু হানিফা! কিংবা বুখারী। না কি হতে চাও হুসাইন আহমদ মাদানী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী। যদি তাদের মতো হতে চাও তবে মনে রাখবে তোমার স্বপ্ন অনেক বড়, পথ অনেক লম্বা যাত্রা শুরু করো, লক্ষপানে পৌঁছার আগে থামা যাবে না। তুমি চলতে থাক। দেখবে একসময় তুমি পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ।
স্বপ্নময় দিগন্তে পৌঁছার জন্য তোমাকে করতে হবে মুজাহাদা। অধ্যাবসায়, সাধনা, ত্যাগ। তুমি যদি চাও জ্ঞানের রাজ্যে সাঁতার কাটতে তবে তোমাকে জ্ঞান সাগরে নামতে হবে। তা পেতে দিতে হবে জীবনের সবটুকু। চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। গভীর রাতে, মুনাজাতে তুলতে হবে দু’হাত। হৃদয়ের সব প্রত্যাশার কথা বলতে হবে আল্লাহর কাছে। তোমাকে হয়ে যেতে হবে আল্লাহর। তবে তুমি হবে আল্লাহর প্রিয়-হবে মানুষের প্রিয়।
তবেই তুমি হবে স্মরণীয়, মানুষের কাছে বরণীয়। তখন এই সমাজকে সমাজের মানুষকে তুমি অনেক কিছু দিতে পারবে। আমাদের অনেক মানুষ প্রয়োজন, আমাদের প্রয়োজন শায়খুল হাদীস, মুহাদ্দিস, মুফতি, তাফসির কারক। আমাদের দরকার সমাজ চিন্তক, রাষ্ট্র চিন্তক, আমাদের দরকার কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক। আমাদের দরকার পরিবেশবীদ, বুদ্ধিজীবী। আইনজীবী, ডাক্তার-নতুন নতুন উদ্ভাবনী আবিষ্কারক।
একজনই সব হতে পারে না। মূলশিক্ষার পাশারপাশি একেকজন একেক লাইনে অবিজ্ঞ হওয়া দরকার। সাহিত্য-সংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তোমাদের কাছে আমাদের অনেক আশা-প্রত্যাশা। আগামীর পৃথিবী তোমাদের, তোমাদের হাতে গড়ে উঠবে সুন্দর পৃথিবী। দূর হবে অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন। তোমাদের মাধ্যমে অর্জিত হবে বিপ্লবের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন। প্রতিষ্ঠিত হবে খেলাফত। কায়েম হবে ন্যায় ইনসাফের সমাজ-রাষ্ট্র।