ছোট্ট নাফিস এবার ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ক্লাসে সবচেয়ে সহজ সরল ছেলে নাফিস। কখনো চুপচাপ আবার কখনো ভাবুক। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তার ভাবনার শেষ নেই । তার একটা পোষা খরগোশ আছে। স্কুল আর খরগোশ নিয়েই তার দিন কেটে যায়।
সেদিন ক্লাসে আব্বাস স্যার বললেন,‘পশু পাখি এবং গাছপালাকে মায়া মমতায় আগলে রেখ। তবেই আমাদের পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠবে।’ নাফিস স্যারের কথাগুলো নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেল। স্যার মাঝে মধ্যেই অনেক কথা বলেন। নাফিসের কাছে সব আবছা- আবছা মনে হয়। মায়া মমতা জিনিসটা কী নাফিস বুঝে উঠতে পারে না। স্যারকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছে। কিন্তু সবাই যদি হাসাহাসি করে?
মায়া-মমতা কি অনুভুতি? নাফিসের মনে রাজ্যের প্রশ্ন। ভাবনার জট খুলছে না কিছুতেই। বাসায় ফিরে পড়ায় মন বসে না। তখনি তার মাথাম এল বড় ভাইয়ার কথা। বড় ভাইয়াকে একবার জিজ্ঞেস করা যায়। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বড় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো নাফিস,
: আচ্ছা ভাইয়া মায়া মমতা জিনিসটা কী?
: ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
: ধরো তোমার খুব প্রিয় একটি কলম হারিয়ে ফেললে। তখন তোমার মনে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয় ওই প্রিয় জিনিসের প্রতি তাই মায়া। আর ওই কলমকে তুমি যেভাবে যত্ন-আত্তি করে আগলে রাখতে তাই মমতা।
নাফিস কিছুটা বুঝতে পারল। ভাবনার জট অনেকখানি খুলল।
সপ্তাহ দুয়েক পরে এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় নাফিস তার পোষা খরগোশকে আর দেখতে পায় না। স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে খেলতে যায় নাফিস। তারপর বাসায় এসে তার পোষা খরগোশকে দেখতে না পেয়ে হন্য হয়ে খুঁজতে শুরু করে। বাড়ির আশেপাশে কোথাও খুঁজে পায় না। নাফিসের বড় ভাই বাবা মা সকলেই খুঁজেন। কিন্তু কোথাও খরগোশটির দেখা মিলল না। শেষমেষ নাফিস কান্নায় ভেঙে পড়লো। প্রিয় খরগোশটি হারানোর শোক তাকে মুষড়ে দিল।বড় ভাই আর বাবা মা’র শান্তনায় কিছুটা শান্ত হল। বেদনাহত নাফিস বুঝতে পারল মমতায় লালন পালন করা প্রিয় খরগোশটির প্রতি তার ছিল মায়া।