আজ রবিবার। সাপ্তাহিক হাটের দিন। বহুদিন পরে সজীব বাবার সাথে হাটে যাচ্ছে।
সজীবদের হাটের নাম চিলাবাজার। মোংলাবন্দরের ঐতিহ্যবাহী পশুর নদীর তীরে অবস্থিত এই হাট। তাদের বাড়ি থেকেও বেশি দূরে নয়। হাটে যেতে দশ মিনিটের মতো সময় লাগে। তবুও একা একা হাটে যাওয়া নিষেধ রয়েছে সজীবর। তবে মাঝে মাঝে বিশেষ প্রয়োজনে বাড়ির বড়রা যখন পাঠায়, তখন যায়।
আজ সজীব শুধু শুধু হাটে আসেনি। তার হাটে আসার উদ্দেশ্য আছে। এখন হাটে নতুন নতুন ফল উঠেছে। সে তার পছন্দ মতো ফল কিনবে। সজীবের প্রিয় ফল তরমুজ। তাই বায়না ধরে হাটে এসেছে। ওর বাবা রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু সজীবের কান্নাকাটির কাছে হার মেনেছেন। অবশেষে সাথে করে হাটে এনেছেন।
হাটের ভিতরে ঢুকতেই সজীবের মনটা আনন্দে ভরে গেল। নানান রকম ফলের কী মিষ্টি ঘ্রাণ! তরমুজ দেখেই সজীবের মনটা খাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠল। আব্বু আগে তরমুজ কেনো না।
ধৈর্য ধর, কিনবো। আগে বাজারটা শেষ করি। কিছু বাদ পড়লে তোর মায়ের প্যানপ্যানানিতে রাতে ঘুমাতে পারবো না।
সজীব আর কিছু বললো না। একদম চুপ হয়ে গেল। কারণ বাবা রেগে গেলে আবার যদি না কিনে দেয়।
সজীবের বাবার বাজার শেষ করতে প্রায় দু’ঘণ্টা লাগলো। হাটও প্রায় শেষের পথে। সজীব আর চুপ করে থাকতে পারলো না। আব্বু হাটতো শেষ হয়ে যাচ্ছে, কখন ফল কিনবে?
ইস্! আমার তো মনেই নেই। তুই মনে করে দিবি না! তোর মায়ের বাজারের লিস্ট যত বড় তাতে আর কিছু মনে থাকে না। চল্ তাড়াতাড়ি। কী কী কিনবি মনে আছে তো?
হুম, আছে।
সজীব সারা হাট ঘুরে একটাই তরমুজ পেল। তাতেই সে খুশি। কম হোক, তবুও তার প্রিয় ফল পেয়েছে তো। তরমুজ ছাড়াও সজীব আম, জাম, তাল, লিচু ও কাঁঠাল কিনলো। এত ফল! ওর যে কী খুশি লাগছে! খুশির জন্যে মনটা আর মানছে না। কখন বাড়ি যাবে, কখন ফল খাবে, তার মনে শুধু এই চিন্তা।
সজীবের বাবার বাজার শেষ হলো। এবার দুজন একটি চায়ের দেকানে ঢুকলো। সজীবের বাবা একটা চায়ের ওর্ডার করলো। সজীবকে কিছু খেতে বললেও কিছুই খেলো না সে। চুপচাপ বসে রইলো।
চা খেতে খেতে সজীবের বাবা আবার গল্প শুরু করলো। এবার সজীবের রাগ হলো। আর বসে থাকতে মন চাইছে না তার।
বাবা, আমি তরমুজ নিয়ে বাড়ি যাই?
ওটা নিয়ে তুই পারবি তো?
হাঁ, পারবো।
আচ্ছা, তবে যা। সাবধানে যাস।
সজীব তরমুজ নিয়ে খুশিতে বাড়ি ফিরছে। সে দেখলো এমন সময় তার বয়সী একটা ছোট ছেলে রাস্তা থেকে পচা তরমুজ কুড়াচ্ছে। সজীব তো অবাক। তাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি পচা তরমুজ দিয়ে কি করবে?
আমার বোনের জন্য নিয়েছি।
কিন্তু সে তো খেতে পারবে না, কারণ ওটা পচা।
কি করবো বলো? আজ ভিক্ষা করে যা টাকা পাইছিলাম তাতো চাল কিনতেই শেষ। বাড়ি গেলেই ছোট বোনটা কান্না জুড়বে। তাই এটা দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। পচা-বাসি যাই হোক নিয়েছি।
সজীবের চোখে জল চলে এলো। তুমি ওটা আমাকে দাও।
ছেলেটি না দিলেও সজীব জোর করে নিয়ে ফেলে দিলো।
ছেলেটি কান্না শুরু করলো। তুমি একি করলে ভাই?
আহা! কেঁদো না তো। আমার কথা শোনো। ধরো, এটা নিয়ে যাও তোমার বোনের জন্য।
ছেলেটি তরমুজ পেয়ে আনন্দে চোখের পানি মুছে ফেলল।
কিন্তু তোমার ব্যাগে তো আর তরমুজ নেই। তুমি কি খাবে?
আমি অন্যসময় কিনে খাবো। তুমি এটা নাও, তোমার বোনকে নিয়ে খেয়ো।
