ফুল সমাচার

মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন-এর আসমান জমিনের মাঝে যা কিছু সৃষ্টি তার সবই নজরকাড়া অপরূপ বৈচিত্র্যময় আর বড় সৌন্দর্যময়। প্রতিটি সৃষ্টি অতুলনীয় করে সাজানো মনের মত। যা যেকোনো মানব-মনকে আকৃষ্ট করে সহসাই। হাজারো সৃষ্টির মাঝে প্রকৃতিকে নিজের মত করে সাজাতে মহান আল্লাহ পাক ফুলও দিয়েছেন। ফুলের সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের বাংলাদেশেও ফুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। ফুলকে স্রষ্টা প্রকৃতির এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ করে সাজিয়ে দিয়েছেন। ফুলকে ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। তাই প্রতিটি মানুষই ফুলপ্রেমী হয়। ছয়ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ফলে এই ছয়টি ঋতুর অপূর্ব সমন্বয় হলো নানান রকম ফুল। ফুল নিজস্ব বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। ঋতু বৈচিত্র্যের সাথে ফুলও তার একান্ত সৌন্দর্য প্রকাশ করে নতুন নতুন সাজে। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল আমাদের এ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যময় পরিবেশকে অত্যন্ত সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলে। প্রত্যেক মানুষকে নির্মল আনন্দ দানে ফুলের বিকল্প হিসেবে আর তেমন কোন সঠিক উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতির মাঝে ফুলের আলাদা এক গুরুত্ব রয়েছে, ফলে কবি ফুলের সুবাসে বিমোহিত হয়ে মনের কথা প্রকাশ করেন- ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই’।

ফুল মানুষের মনে একধরনের বিনোদনের খোরাক জোগায়। ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয় মানুষ। আমাদের বাংলাদেশে ঋতুভেদে বিভিন্ন সময়ে নানান প্রজাতির ফুলের সমারোহ মানুষকে করে। ঋতু বদলের সাথে সাথে ফুল সৌন্দর্যের মহড়া নিয়ে হাজির হয়।

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপের দাবদাহে মানুষ অস্বস্তি বোধ করে। যখন চরমে পর্যায় পৌঁছে তখনও রকমারী ফুলের বাহার দেখে প্রশান্তি পায় ফুলপ্রেমী মানুষ। গাছেগাছে দেখতে পাই গ্রীষ্মকালীন হরেক রকম ফুলের দারুণ ও অপূর্ব সমারোহ। এ ঋতুতে বেলী, পলাশ, বকুল, গুলমেহের, চাঁপা, গন্ধরাজ হলো উল্লেখযোগ্য ফুল।

ঋতুর পরিবর্তনের পালাবদলে গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষাকাল। এ ঋতুতে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে নদী নালা খাল বিল পুকুর ডোবা মাঠ ঘাট পারিতে একেবারে টইটম্বুর হয়ে যায়। তবু দেখা যায় নানা ধরণের ফুলের মনোহর সমাহার। কদম, জুঁই, শাপলা, কেয়া, মালতী, করবী ফুলে বাংলাদেশের প্রকৃতি নতুনভাবে সাজে। যোগ হয় সৌন্দর্যেও নতুন মাত্রা।

এরপর আসে শরৎকাল। এ ঋতুতে আমাদের দেশের পরিবেশ থাকে সাধারণত শান্ত ও স্নিগ্ধময়। অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত থেকে সবেমাত্র মুক্তি পাওয়া গাছগাছালি। নিজেদের সৌন্দর্যে বিকশিত হয় নানা রকম ফুলে। সর্বক্ষেত্রে বিরাজ করে সজীব ও প্রাণবন্ত প্রকৃতি। ফুলের সুবাসে প্রকৃতি ভরে উঠে মৌ মৌ হাওয়ায়। সবুজের নিজস্ব সমারোহে সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠে পদ্ম, কাশফুল, কামিনী এবং আরো নাম না জানা রকমারী ফুলে।

শরতের সাজানো পরিবেশ শেষে নীল আকাশে হালকা সাদা সাদা মেঘমালা নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয় হেমন্তকাল। এ সময় সোনালি ফসলের নানা গন্ধে মন আনন্দ জেগে উঠে তখনই অন্যরকম এক ভালোলাগার জোগান দেয়। নাকে ভেসে আসে বিভিন্ন ফুলের বিমোহিত মধুর ও নির্মল সুবাস। হেমন্তে ফুলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় চাঁপা, শেফালী, পারুল ইত্যাদি ফুল।

শীতকালে সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকটা প্রাণহীন বলেই মনে হয়। প্রায় গাছের সবুজপাতা এ সময় ঝরতে দেখা যায়। তবু এর মধ্যেও পরিবেশ মেতে উঠে এক মোহময় ও মধুর করে তুলে শীতকালীন নানাধরণের ফুল। এ ঋতুতে আমাদের বাংলাদেশে গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী, গাঁদা ও বকুল ফুলের সাক্ষাত পাওয়া যায়। এ ফুলগুলোর আকর্ষণীয় সুবাস মানুষকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে মাতিয়ে রাখে।
শীতের রুক্ষ পরিবেশ থেকে মুক্ত করে প্রকৃতি নতুনরূপে সাজে রকমারী ফুলে। সাধারণত শিমুল, পলাশ, মাধবী ও অশোকফুলে প্রকৃতি একাকার হয়ে যায়।

এছাড়াও আরো কিছু বনফুল দেখতে পাওয়া যায়। যা কোন প্রকার চাষ ও যত্ন ছাড়াই অনুকূল পরিবেশ পেয়ে বেড়ে উঠে। ফলে কিছু ফুলকে বলা হয় বনফুল। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নানারকম উদ্ভিদ ও বনফুল রয়েছে। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কিছু বনফুলের মধ্যে রয়েছে পিতরাজ, বেত, পাহাড়ি কাশ, ঘাসফুল, হিজল, রক্তকমল, অলকানন্দ, ঢোলপাতা, হলদে ফুল প্রভৃতি।

আরো কিছু ফুল রয়েছে যাদেরকে লতাফুল বলা হয়ে থাকে। এ ফুলগুলো কিন্তু মাটিতে জায়গা দখল না করে কিছুর সাহায্যে সুন্দরভাবে বিকশিত হয় বলে বলা হয় লতাফুল। দেখা যায় এ ফুল সাধারণত দালান, বাড়ির ফটক, বেঁড়া ইত্যাদির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এ জন্য লতাফুলের বিশেষ কদর রয়েছে মানবসমাজে বসবাসকারী কিছু ফুলপ্রেমী সুন্দর মনের মানুষদের কাছে। এফুলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ফুল হচ্ছে নীলমণি লতা, ঝুমকা লতা, অপরাজিতা, চন্দ্রমুখী, দুধিয়া লতা, কাঁঠাল চাপা, চামেলি, মধুমালতী, মাধবীলতা, কুঞ্জলতা প্রভৃতি।

পুষ্পবৃক্ষ নামক আরো কিছু ফুলের নাম জানা যায়। পুষ্পফুলগুলো সাধারণত বড় বড় বাগান, পার্ক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণ সাজাতে এ পুষ্পবৃক্ষগুলো লাগানো হয়ে থাকে। মাঠে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে এ ধরনের ফুলের গাছ বিশেষ অবদান রাখে। প্রকৃতি থেকে সুন্দর, নির্মল ও নজরকাড়া মনোরম দৃশ্য তৈরি করতে পুষ্পবৃক্ষকে ভালোবেসে সযত্নে আগলে রাখে। বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য পুষ্পবৃক্ষ হলো- ছাতিম, জারুল, বকুল, শেফালী, স্বর্ণচাপা, নাগেশ্বর প্রভৃতি।

ফুলকে মানুষের অনাবিল শান্তি ও নির্মল আনন্দের উৎস হিসেবে মনে করা হয়। মনের মত করে নিজের পরিবেশটাকে সাজাতে ফুলের কোন বিকল্প নেই। পরিবেশের সার্বিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও ফুলের অপরিসীম অবদান রয়েছে। গাছ মানুষের জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ নানারকম ফুল চাষ করে বর্তমানে আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল হচ্ছে। যেকোনো জাতীয় উৎসব স্মৃতিময় করে তুলতে ফুলের চাহিদা অত্যন্ত ব্যাপক। শুধু তাই নয়, ফুলছাড়া বর্তমানে কোন অনুষ্ঠানের চিন্তা করা যায় না। আমরা জানি, ফুলের মনোরম ছোঁয়াকে তুলনা করা হয় প্রত্যেক শিশুর নিষ্পাপ হাসির সাথে। শিশুর একটি হাসি যেমন মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে নির্মল আনন্দ দিতে পারে, তেমনি ফুলেরও রয়েছে সতেজ ও সজীব রাখার মত অসামান্য মাধুর্য। সর্বোপরি ফুল মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।

মানুষ ফুলের সৌন্দর্যের পূজারী। ফুল প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রকৃতি থেকে এক মহামূল্যবান উপহার সামগ্রী। কাজেই এদেশের মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে ফুলের মধুর সৌরভ। সারাবছরই বাংলাদেশ থাকে ফুলে ফুলে সুশোভিত ও সজ্জিত। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য ফুলের কোনো বিকল্প নেই।

 

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য