আলতাফ হোসেন হাট থেকে ইয়া বড় রুই মাছ কিনেছেন। বাড়িতে জামাই এসেছে। জামাই মানুষ, গরুর বা খাসির গোস্ত খাওয়াতে না পারলেও অন্তত একটা বড় মাছের টুকরা খাওয়াতেই হবে। তা না হলে জামাইয়ের কাছে ইজ্জত থাকে না। তাই খুব শখ করে অনেকক্ষণ দরকষাকষি করেই মাছটা কিনেছেন। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন চায়ের দোকানের মাচানে বসে। অপেক্ষা বলতে দু-একজনকে সাথে পেলে মন্দ হয় না। হাট-বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটা বটগাছ পড়ে। ভয়টা ওখানেই। দিনেরবেলা কোনো সমস্যা নেই। সন্ধ্যার পর যত ঝামেলা। তবে প্রতিদিন কেউ না কেউ ভয় পায় তা কিন্তু নয়। মাঝেমধ্যে কেউ না কেউ ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে গাছতলায়। তাই এখন আর কেউ সন্ধ্যার পর একা একা এই পথ মাড়ায় না। কাউকে না পেলে তখন একপ্রকার অনুপায় হয়েই একা একা আসতে বাধ্য হয়।
সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। রাত বাড়ছে। আলতাফ হোসেন অপেক্ষায় থাকেন। গ্রামের কাউকে পাওয়া যায় না। আর অপেক্ষা করা যায় না। আল্লাহর নাম নিয়ে দোয়া দরূদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে মাছটা হাতে ঝুলিয়ে হাঁটতে লাগলেন বাড়ির পথে।
আলতাফ হোসের আজ পর্যন্ত এখনো এভাবে ধরা খাননি। হাট-বাজার থেকে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরেন। আজ মাছটা কিনতেই দেরি হয়ে গেল। বড় মাছ অল্প দরে কিনতে হলে সন্ধ্যার আগে আগেই কিনতে হয়। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে লোকজন কমতে থাকে। বিক্রেতারাও অল্প দরে মাছ বিক্রি করে দেয়। এই সুযোগটা নেওয়ার জন্যই আলতাফ হোসেনের দেরি হয়েছে। এখন ঠ্যালা সামলাও।
আলতাফ হোসেন পা চালিয়ে হাঁটছেন। মনে মনে ভাবছেন বটগাছটা পার হতে পারলেই দে দৌড়। ঘন অন্ধকার। পথ চলতে কষ্ট হয়। বলতে গেলে সামনে কিছুই দেখা যায় না। আলতাফ হোসেন রাস্তার মাঝ বরাবর দিয়ে হাঁটেন। মুরুব্বিরা বলেন, রাস্তার মাঝ বরাবর হাঁটলে নাকি ভূতেরা ধরে না। রাস্তার মাঝে নাকি তারা আসতে ভয় পায়। ভূতেরা ভয় পায় তাহলে। আলতাফ হোসেন সামনের দিকে হাঁটেন আর মাঝেমধ্যে পেছন ঘুরে তাকান। মনে হচ্ছে কেউ পেছনে পেছনে আসছে। মনের ভুল। শরীর শিউরিয়ে ওঠে। বটগাছের পাতা নড়ে উঠল মনে হয়। ডালগুলো সামনে নুয়ে পড়ছে। বটগাছের কাছে আসতেই ঘটল বিপত্তি। আলতাফ হোসেন গাছের কাছে আসতেই গাছ থেকে ঝুপঝাপ তিনটা ভূত লাফিয়ে পড়ল আলতাফের সামনে। সাদা কাপড় পরা ক্যাবলা ভূতের দল। আলতাফ হোসেন জায়গায় পড়ে গেলেন। এরপর আর কিছুই মনে নেই তার।
রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে আলতাফের বৌ জামাইকে নিয়ে বের হয়। সাথে গ্রামের আরও দু’একজনকে সাথে নেয়। টর্চ লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বটগাছের কাছে আলতাফ পড়ে আছেন। বেচারাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সাধের রুই মাছ হারিয়ে গেল; সাথে লুঙ্গির গোছায় থাকা কিছু নগদ টাকা।
সকালবেলা আলতাফের বাড়িতে লোকজনের ভিড়। কিভাবে ভূতের খপ্পরে পড়লেন আর কী কী খোয়া গেল তা এক এক করে বলছেন আফতাফ হোসেন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। গ্রামের মানুষ আতঙ্কে আছে।
বটগাছে বাস করে ক্যাবলা ভূতের দল। একটা দুটো না, বেশ কয়েকটা ভূত । ওরা দল বেধে ভয় দেখায়। লোকজন ভূতের মুখেই শুনেছে, নিজেরাই বলেছে ওরা ক্যাবলা ভুত । কথাগুলো একটানা বলল মিঠু।
রাশেদ, সোহেল আর মিঠু আলতাফ হোসেনের মুখে ভূতের ঘটনা শোনারপর রাস্তায় বের হলো। রাশেদ ঢাকায় থাকে। বাবা মায়ের সাথে ছোটখালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। এখানে তার সমবয়সি সোহেল আর মিঠুকে পেয়েছে। ওদের সাথেই ঘুরে বেড়ায়, গ্রাম দেখে। কিন্তু মায়ের কড়া নিষেধ, সন্ধ্যার পর কোথাও যাওয়া যাবে না। এখানে ভূতের উপদ্রব। রাশেদ বিরক্ত হয়। ছুঁটি পেয়ে এখানে এসেছে বেড়াতে অথচ বেড়াতে পারবে না। গ্রামে রাতে ঘুরে ঘুরে চায়ের দোকানে বসে চা খাব। বন্ধুদের সাথে লুকোচুরি খেলব। তবেই না মজা হবে। এর মধ্যেই আলতাফ হোসেনের মুখেই শুনল সব ঘটনা।
রাশেদ বলল, ‘ভূত বলে কিছুই নেই।’
সোহেল বলল, ‘তাহলে লোকজন ভয় পায় কিসে? বটগাছের কাছে অনেকেই ভয় পায়। একজন দুজন হলে না হয় মেনে নেয়া যেত। কিন্তু প্রায় এই ঘটনা ঘটে।’
মিঠু বলল, ‘অবশ্যই ভূত আছে। গল্পের বইতে পড়িসনি মেছো ভূত, গেছো ভূত, পানি ভূত, বোতল ভূত আরও কত রকমের ভূত। বটগাছের ভূতগুলো মেছো ভূত। দেখলি না, আলতাফ চাচার ইয়া বড় রুই মাছটা গায়েব হয়ে গেল। বড় শখ করে কিনেছিলেন মাছটা।’
রাশেদ বলল, ‘তোরা যাই বলিস না কেন আমি একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।’
মিঠু বলল, ‘নিশ্চয় তুই গোয়েন্দা কাহিনি পড়িস? গোয়েন্দাদের শুধু রহস্যের গন্ধ আর সন্দেহ।’
সোহেল বলল, ‘বইয়ের পাতায় গোয়েন্দারা চলে লেখকের কলমের ইশারায়। ওসব চিন্তা বাদ দে।’
রাশেদ কিছুক্ষণ পর বলল, ‘তোরা কি জানিস আমার ছোট মামা গোয়েন্দা? মন্টু মামা। মামার সাথে বেশ কয়েকবার রহস্যের উদ্ঘাটন করেছি।’
মিঠু বলল, ‘তাহলে খবর দিয়ে নিয়ে আয় না তোর গোয়েন্দা মামাকে।’
মামার কথা মনে হতেই রাশেদ হাতের আঙ্গুলের তুড়ি দিয়ে বলল, ‘বাসায় গেলাম, বিকেলে দেখা হচ্ছে।’
মিঠু আর সোহেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাশেদ খুব দ্রুত চলে গেল।
বাড়িতে এসে মায়ের ফোন থেকে মামাকে ফোন কল করল রাশেদ। মামাকে সব ঘটনা খুলে বলল। মামা তো এই কাহিনি শুনে হাসতে শুরু করলেন। সটাসট বলে দিলেন এখন হাতে সময় নেই। সরকারি একটা মামলায় গিয়েছেন সিলেটে। এত ছোটখাটো কাজ এখন নেন না।
রাশেদ বলল, ‘মামা, এখানে বন্ধুদের সাথে তোমাকে নিয়ে আলাপ করেছি। এখন তুমি যদি না আসো তাহলে আমার ইজ্জত চলে যাবে।’
মামা বললেন, ‘কাজটা তুই নিজেই করতে পারিস। এর আগে তো আমার সাথে কাজ করেছিস। এখন নিজের মগজটা একটু কাজে লাগা। পরখ করে দেখ কিছু শিখতে পেরেছিস কিনা।’
রাশেদ হতাশ হয়ে বলল, ‘মামা, তোমাকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে।’
মন্টু মামা এবার একগাল হেসে বললেন, ‘রাগছিস কেন? এটা ধরে নে তোর জন্য একটা বোনাস পয়েন্ট। এই রহস্যটা উদ্ঘাটন করতে পারলে পরবর্তীতে আমার সাথে বড় বড় কাজের সুযোগ পাবি। দেখা যাক তোর অভিজ্ঞতা কতটুকু হয়েছে।’
রাশেদ বলল, ‘আচ্ছ মানলাম। কিন্তু শুরুটা করবো কোথায় থেকে?’
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, ‘যেখান থেকে শেষ, সেখান থেকেই শুরু। আর হ্যাঁ, আলতাফ হোসেনের কথাগুলো একেবারে হাস্যকর মনে করিস না। কথাগুলো নিয়ে একটু ভাবিস। আলতাফ হোসের কথার মধ্যেই তোর সমাধান লুকিয়ে আছে। খুঁজে বের কর। দেখিস, ভূতে আবার তোর ঘাড় মটকিয়ে না দেয়।’ কথা শেষ হতেই লাইনটা কেটে দিলেন মামা।
মামার প্রতি অভিমান হয় রাশেদের। এই রহস্যের সমাধান করে মামাকে দেখাতে চায় রাশেদÑ সেও পারে।
বিকেল বেলা রাশেদ মিঠু আর সোহেলকে সাথে নিয়ে বের হয়। প্রথমে আসে বটগাছের কাছে। ঝুপড়ি একটা বটগাছ। অনেক বয়স গাছটার। গ্রাম থেকে হাট-বাজারে যাওয়ার জন্য এই একটাই রাস্তা। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই গ্রামের যারা শহরে কাজ করে তারা খুব সমস্যায় পড়েছে। কাজ শেষ না হতেই সন্ধ্যার আগে গ্রামে ফিরতে হয়। সন্ধ্যার পর হলে ভূতের কবলে পড়তে হবে।
রাশেদ জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা, যারা ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে তারা কি প্রত্যেকেই মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছিল?’
সোহেল বলল, ‘না, সন্ধ্যার পর যে আসে তাকেই ভয় দেখায়।’
রাশেদ মাটিতে কী যেন খুঁজতে খুঁজতে বলল, ‘একজন থাকলে ভয় দেখায় নাকি দুজন থাকলেও ভয় দেখিয়েছে?’
মিঠু বলল, ‘কেউ একা একা এলে ভয় পায়। মানুষ একা থাকলেই ভয় দেখিয়ে মজা পায় ভূতেরা। ভূত তো আর দল বেঁধে যাওয়া মানুষকে ভয় দেখাবে না।’
রাশেদ ভালো করে আশেপাশের জায়গাগুলো দেখে নিল। বটগাছের আশেপাশে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখে বলল, ‘চল, এবার যাওয়া যাক।’
মিঠু বলল, ‘কেন, সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই? তোর না ভূতের ভয় নেই?’
রাশেদ বলল, ‘ভূতে আমার ভীষণ ভয়। এই ভূত নিয়ে বেশি ভাবা যাবে না। চল যাই।’
চোখে ঘুম নেই। সারাক্ষণ বটতলা আর আলতাফ হোসেনের কথাগুলো ভাবতে থাকে রাশেদ। মন্টু মামা বলেছেন আলতাফ হোসেনের কাহিনির মধ্যেই রহস্যের সমাধান জ¦লজ¦ল করছে। শুধু বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে নিতে হবে। সমস্ত ঘটনাটা কল্পনা করতে থাকে রাশেদ। যদিও তার ভূতে বিশ^াস নেই।
সারারাত রাশেদের খুব একটা ভালো ঘুম হয়নি। ঘুমের মধ্যে কল্পনা করেছে বারবার; গ্রামের মানুষের এই ভূতের ভয় রহস্য দূর করতে পারলে মন্টু মামার সাথে বড় বড় কাজ করার সুযোগ পাবে। মামাও রাশেদের উপর ভরসা পাবে। তাই এই রহস্যের উদ্ঘাটন তাকে করতেই হবে।
বিকেলের সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। আবছায়া আলো ছায়ার খেলা হচ্ছে চারিদিকে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষগুলো দোকান বন্ধ করতে শুরু করেছে। লোকজনের ভিড় কমে এসেছে। রাশেদ একাই এসেছে মোকামে। সারা বাজার একাই চষে বেড়িয়েছে। চায়ের দোকানে বসে এককাপ চা অর্ডার করে বসে পড়ল মাচানে। ক্লান্ত হয়ে গেছে। হবে না কেন, সকাল বেলা বের হয়েছে। কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলেছে খুব গোপনে। দুপুরে বাসায় ফেরেনি। হোটেলে অল্প কিছু খেয়েছে। নানা ছুতোয় দোকানদারদের সাথে কথা বলেছে। যদি কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে কাউকেই সরাসরি তদন্তের ব্যাপারে কিছু বলেনি।
এতক্ষণে চা তৈরি হয়েছে গেছে। চায়ের কাপ সামনে ধরে বলল, ‘কোথায় যাবেন?’
রাশেদ হাসি মুখে বলল, ‘ফতেপুর।’
দোকানে কাস্টমার কম। দোকানদার রাশেদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দেয়ার চেষ্টা করে নানা কথা শুরু করল। মনে হচ্ছে লোকটা রাশেদকে দেরি করিয়ে দিতে চাইছে। চায়ের দাম পরিশোধ করে দিয়ে উঠে পড়ল রাশেদ।
সন্ধ্যার আগে আগে বাসায় ফিরল রাশেদ। মিঠু আর সোহেল সারাদিনে কম করে হলেও পাঁচবার রাশেদের খোঁজে এসেছে। রাশেদ নিজেই মিঠু আর সোহেলকে ডেকে নেয়।
সোহেল বলল, ‘সারাদিন কোথায় গিয়েছিলি, কতবার খোঁজ করলাম।’
রাশেদ বলল, ‘সে অনেক জায়গায়। পরে বলবো। এখন কী বলি শোন, তোদের সাহায্য লাগবে। সাথে আরও কয়েকজন। তবে কাজটা করতে হবে খুব গোপনে।’
মিঠু বলল, ‘কী করতে হবে সে কথা বল্। আমরা আছি।’
রাশেদ বলল, ‘গ্রামের দু-একজন সাহসী ও বিশ^স্ত মানুষ দরকার।’
সোহেল বলল, ‘ব্যাপার না। আমার উপর ছেড়ে দে। আমি ম্যানেজ করে দেবো। তবে বল পরিকল্পনাটা কী?’
রাশেদ কিছুটা গোয়েন্দার ভাব নিয়ে বলল, ‘এখন বলব না। সব শুনবি কাল সকালে। আগে লোক নিয়ে আয়।’ কথা শেষ করে রাশেদ চলে যেতে যেতে বলল, ‘সকালে আমার লোক চাই। মিঠু তোর বাড়িতে।’
তাহের আলী চায়ের দোকানে বসে একটা বিস্কুট খেয়ে পানের অর্ডার করল। পানটা মুখে পুরে চিবুতে চিবুতে কেউ গ্রামের দিকে যায় কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ভ্যানে করে কয়েক বস্তা ধান নিয়ে এসেছিল পাইকারের কাছে বিক্রি করার জন্য। ধান কেনা দালাল টাকা দিতে দেরি করেছে। সন্ধ্যা হয়ে রাত নেমেছে। এখন একা একা গ্রামে যায় কী করে। চায়ের দোকানদার জিজ্ঞেস করল, ‘চেনা চেনা লাগে। বাড়ি ফতেপুর না?’
তাহের আলী পান মুখে বলল, ‘হু।’
চায়ের দোকানদার বলল, ‘তা কী কাজে আসা?’
তাহের আলী বলল, ‘ধান বিক্রি করতি আইছিলাম।’
মাগরিবের আযান হয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে। চায়ের দোকানদারকে বলল, ‘যাই গো রাইত হয়ে গেল।’
আর অপেক্ষা করল না তাহের আলী। কথা শেষ করে ভ্যানটা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। তাহের আলী গ্রামের একজন সাহসী মানুষ হিসেবে পরিচিতি আছে। সাহস করেই রাস্তায় একা একা চলেছে। বটতলার কাছে আসতেই হঠাৎ গাছ থেকে ঝুপঝাপ তিনটি ভূত ঝাঁপ দিয়ে সামলে দাঁড়িয়ে গেল। সাথে সাথে পাশের ক্ষেতে লুকিয়ে থাকা মিঠু, সোহেলসহ আর কয়েকজন বেরিয়ে এসে ভূতদের ঘিরে ধরল। তাহের আলী তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভূতকে কষে একটা থাপ্পড় দিলো। থাপ্পড় খেয়ে ভূত ব্যাটা কুপোকাত। সবাই টর্চ লাইট জ¦ালিয়ে সারা এলাকা আলো করে ফেলল। এরই মধ্যে রাশেদ শহর থেকে পুলিশ নিয়ে হাজির। সাথে চায়ের দোকানদার। সাদা পাঞ্জাবি পড়া আর মুখে সাদা চুনের রং করা ভূতদের পুলিশের হাতে তুলে দিল।
সকাল বেলা রাশেদের খালার বাড়ির উঠানে গ্রামের অর্ধেক মানুষ হাজির হয়েছে। তাদের কৌতূহল, কী করে করল ছেলেটা। সবার জানার ইচ্ছা।
রাশেদকে জিজ্ঞেস করল মিঠু, ‘তুই কীভাবে বুঝলি যে, ‘এসব ভূতের কাণ্ড না, মানুষ করছে?’
রাশেদ বলল, ‘প্রথমত আমার ভূতে বিশ^াস নেই। তবুও তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম বটগাছে ভূত আছে। আর সেই ভূতেই ভয় দেখিয়ে মাছ নিয়ে নেয়। কিন্তু সবাই মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরে না। অনেকের মাছের সাথে নগদ টাকাও হারিয়েছে। আলতাফ চাচার সেদিন মাছের সাথে নগদ টাকা হারিয়ে ছিল। তখনই মাথায় এলো, যদিও ভূতেরা মাছ নিয়ে থাকে তবে টাকা কেনো নেবে?’
রাশেদ এবার চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল, ‘দ্বিতীয়ত, সেদিন আমরা বটতলায় গিয়েছিলাম। ওখানে আশেপাশে দেখলাম অসংখ্য পায়ের ছাপ। ভূতের পায়ের ছাপ মানুষের পায়ের ছাপের মতো হলে কেন? গাছের গোড়াটাও বেশ পরিষ্কার। যে গাছের পাশ দিয়ে মানুষ যেতে ভয় পায় অথচ সেই গাছের গোড়া এত পরিষ্কার? এটাও একটা সন্দেহের তালিকায় পড়ে।
তোদের না জানিয়ে আমি সেদিন এই এলাকার ভুক্তভোগীদের সাথে একান্তে আলাপ করেছিলাম। সবাই একই কথা যে, তারা গ্রামে আশার আগে ঐ চায়ের দোকানে বসে। চাওয়ালা সবাইকে একই কথা জিজ্ঞেস করে। তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল চাওয়ালা এর সাথে জড়িত। তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল। তাই তাহের চাচাকে এই নাটকটা করতে আমিই বলেছিলাম। চায়ের দোকানদার ঝোপ বুঝে কোপ মারে। মোবাইল করে জানিয়ে দেয় ভূতদের। তখন ওরা সন্ধ্যার পর গাছে উঠে বসে থাকে।
রাতের বেলা পা ছুঁই ছুঁই লম্বা সাদা পাঞ্জাবি পরে আর মুখে সাদা রং মেখে ক্যাবলা ভূতের নামে এতদিন ছিনতাই করছিল। রুমালে চেতনানাশক স্প্রে দেওয়া থাকে। রুমাল নাকে কাছে নিয়ে আসতেই অজ্ঞান হয়ে যায়। ওরা সবাই পাশের গ্রামের। কথায় আছেÑ চোরের সাতদিন, গেরস্থের একদিন।’
গ্রামের সবাই রাশেদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
রাশেদ মন্টু মামাকে ফোন করে জানিয়ে দিল তার মামলার সমাধানের কথা। মামা বললেন, ‘তোর জন্য একটা হ্যাটটুপি উপহার রইল। পরের কাজটা তোকে কিন্তু সহযোগিতা করতে হবে।’
রাশেদের আনন্দ দেখে কে। আজ নিজেকে মামার মতো পাকা গোয়েন্দা মনে হচ্ছে।