পৃথিবীর মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বন্ধু। শুধু বন্ধুই নয়। আল্লাহ স্বয়ং তাঁর বন্ধুর ওপর এত খুশি যা কোন নবীর বেলায় ঘটেনি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এত গুণ দিয়ে তার নবীকে প্রেরণ করেছেন তা লিখে কোনদিন শেষ করা যাবে না। নবীজী যেমন আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ছিলেন। তেমন ছিলেন সাহাবীদের অভিভাবক। সাহাবীরা কখনো নবীজীকে কষ্ট দিতেন না বরং দ্বীনের কাজে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন তাঁরা। তাঁরা ছিলেন অকুতোভয়ে সচেষ্ট দিপ্ত ঈমান বহনকারী। রাসূলের হুকুম তামিলকারী। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এতোটা ভালবাসতেন যা কলম দিয়ে কখনো লেখা সম্ভব নয়। এ জন্য তারা আসহাবী কাননুজুম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দশজন সাহাবীর গুণের কথা এখানে লিপিব্দ করা হল।
প্রথম: ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রা.। যিনি ছিলেন রাসূলের শ্বশুর। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা.-এর বাবা। তৎকালীন সময় আরবের বিশাল ধনী সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একমাত্র হিজরতকারী সাহাবী। তিনি অত্যন্ত নরম হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। যখনি নামাজে দাঁড়াতেন তর তর করে চোখ দিয়ে পানি পড়তো। একদিন মসজিদে নববীতে হঠাৎ করে অসময়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন হযরত আবু বকর রা.। নবীজী এসে হাজির হলেন। আবু বকর আপনার কি হয়েছে? কাঁদছেন কেন?
আবু বকর রা. উত্তর দিলেন আমাকে আল্লাহ মাফ করেছে তো?
পরকালের ভয়ে হযরত আবু বকরের এ ক্রন্দন যেন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় পরকাল আছে, পরকালের বিচার আছে। অথচ তিনি দুনিয়াতে বেহেশতের সার্টিফিকেট পাওয়া প্রথম দশজন সাহাবীর প্রথমজন। তাঁর কোন গুণাহ নেই। তিনি দুটো বেহেস্তের মালিক।
দ্বিতীয়: দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা.। তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা বা দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দুনিয়াতে বেহেস্তে যাওয়া সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী ছিলেন। তার গুণ ছিল অনেক কঠোর। তিনি অত্যন্ত কঠিন হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাঁর কঠিন হৃদয় ন্যায় পরায়নতা ছিল ইসলামের পক্ষে। ইসলাম বিদ্বেষী কোন কিছু তিনি হতে দিতেন না। সামান্য মদ খাওয়ার জন্য তাঁর ছেলেও তাঁর হাত থেকে রেহাই পায়নি। আশিটা বেত্রাঘাত তিনি করেছেন। ছেলের মৃত্যুর পর বাকী বিশ বেত্রাঘাত কবরে করেছেন। কোন ছাড় দেননি। খলিফা হযরত ওমর রা. মৃত্যুর ১২ বছর পর তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ স্বপ্নে দেখেন। আব্বা আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন। হযরত ওমর রা. বললেন- আমার মৃত্যুর ১২ বছর পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে দুনিয়ার সব হিসাব নিকাশ পেশ করলাম। এসব হিসাব নিকাশ দিতে আমার ১২ বছর লেগেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর গাফ্ফার নামের উছিলায় আমাকে কোন রকম ক্ষমা করে দিয়েছেন। দীর্ঘ ১২ বৎসর যাবৎ হিসাব নিকাশ দেওয়ার পর সবে মাত্র জান্নাতের নহর থেকে গোসল দিয়ে বেহেস্তে যাচ্ছি আর তোমার সাথে সাক্ষাত করছি। হযরত ওমর রা.ও ছিলেন রাসূল সা.-এর শ^শুর। তাঁর কন্যা হাফছাকে রাসূলের কাছে বিবাহ দেন।
তৃতীয়ত: ৩য় সাহাবী হযরত উছমান রা.। যিনি রাসূলের মেয়ের জামাতা ছিলেন। বেহেস্তের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবী ছিলেন। ইসলামের খেলাফতের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তৎকালীন সময়ে আবরবের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সম্পদ দিয়ে সবসময় অবলীলায় মানুষদেরকে সাহায্য করতেন। হযরত ওসমান ছিলেন অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির সাহাবী। তিনি যখনি কোন কবরের পাশে যেতেন কেঁদে কেঁদে চোখ ভাসিয়ে দিতেন। শুধু কি তাই এক পর্যায়ে তিনি বসে যেতেন। তিনি গোসল করার সময় আসপাশে পর্দা দিয়ে বসে গোসল করতেন। তার শরীর কেউ দেখতো না।
চতুর্থত ঃ ইসলামের চতুর্থ খলিফা অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ছিলেন হযরত আলী রা.। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছোট মেয়ের জামাতা ছিলেন। চাচা আবু তালিবের ছেলে ছিলেন অর্থাৎ চাচাতো ভাই। দুনিয়াতে সুসংবাদ পাওয়া দশজন সাহাবীদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি শিক্ষানুরাগী ছিলেন। আলী রা. সবচেয়ে ভালগুণ ছিল বিচারের রায় দেয়া। আলী রা. রায় ছিল বিরল।
পঞ্চমত: সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন তাজবীদের সাথে “উবাই ইবনে কাব”। উবাই ইবনে ছিলেন নামজাদা ক্বারী। উবাই ইবনে কাবের নেতৃত্বে মসজিদে ২০ রাকাত দিয়ে তারাবি শুরু হয়। এই উবাই ইবনে কাব এমন এক সাহাবী যার নিকট কুরআন পাঠ শুনার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবীকে বলেছেন। উবাই ইবনে কাব শুনে আশ্চর্য হলেন। আল্লাহ তায়ালা আমার নাম ধরে বলেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হ্যাঁ বলেছেন।
উবাই ইবনে কাব তো কান্নায় বেহুশ। আল্লাহ আপনাকে বলেছেন আমার নিকট কুরআন পাঠ শুনার জন্য। এত সুললিত কণ্ঠ ছিল উবাই ইবনে কাবের। আল্লাহ স্বয়ং নিজেই পছন্দ করতেন তাঁর তেলাওয়াত।
ষষ্ঠত: হালাল ও হারামের বিধান সবচেয়ে বেশি বুঝতেন “মুয়ায ইবনে জাবাল”। তাঁর এগুণের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ছিলেন। আমাদের সবচেয়ে বেশি হালাল ও হারামের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। হারাম খাওয়া যাবে না। অবশ্যই হালাল রিজিক ভক্ষণ করতে হবে।
সপ্তম: (আল্লাহর দেয়া উত্তরাধিকারী বণ্টননামা) ফারায়েজ বা বণ্টননামা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতেন সাহাবীদের মধ্যে যায়েদ ইবনে ছাবেত। বণ্টনের প্রতিটি ক্ষেত্র ছিল তাঁর নখদর্পণে। তাঁর মত পৃথিবীতে কেউ ফারায়েজ বুঝত না। সাহাবীরা যা বুঝতেন না সাথে সাথে চলে যেতে যায়েদের নিকট। যায়েদ তাৎক্ষণিক সমাধা করার চেষ্টা করতেন।
অষ্টম: সবচেয়ে বেশি বিশ^াসী সাহাবী বা আমানতদারী আবু ওবায়দা ইবনে জাররাহ। তিনি প্রতিটি কাজে বিশ^াসের সব ডালপালা বিস্তার করে সবার সম্মুখে স্মৃতি রেখে গেছেন। তবে রাসূলের মত নয়। রাসূলের আদর্শের সৈনিক ছিলেন এবং ওবায়দা ইবনে যাররাহ ছিলেন আমানতের মূর্ত প্রতীক।
নবম: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার বা জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। তাঁর জ্ঞানের প্রশংসা সাহাবীরা সব সময় করতেন এবং তিনি একজন ভালো কারীও ছিলেন। আবু জেহেল একদিন এ সাহাবীর গালে চপেটাঘাত করেছিল পবিত্র কুরআন তেলোয়াত করার কারণে।
দশম: হযরত খালিদ ইবনে অলিদ ছিলেন শ্রেষ্ঠযোদ্ধা। যুদ্ধের ময়দানে একাই কাফেরদের ভিতরে ঢুকে পরতেন। কাফেররা তাঁকে খুব ভয় পেত। তিনি একাই কাফেরদেরকে কচুকাটার মতো কাটতেন। সেই জন্য তাঁকে সাইফুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সাইফুল্লাহ মানে আল্লাহর তলোয়ার।
১ thought on “রাসূলের সাহাবীদের বিশেষ গুণ”
very nice post.