লাল সবুজের বাংলাদেশ

লাল সবুজের বাংলাদেশ

মার্চ মাস। স্বাধীনতার মাস। সংগ্রাম আর আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছার মাস। অগ্নিঝরা মার্চ অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মাস।
বন্ধুরা! তোমরা মার্চের গল্প জান। জান একাত্তরের কথা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই ভয়াল সময়ের কথা। ১৯৭১ সালের গল্প মানে রক্তের গল্প, সংগ্রামের গল্প। চারদিকে ছিলো মৃত্যুর মিছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশিত হয় ২৫ মার্চ কালোরাতে।
২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনারা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। যার ফলে ২৬ মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ডাক আসে। আর মুক্তির আশায় এ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনতা সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে গ্রামের কৃষক, শহুরে শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। শিল্পী-সাহিত্যিক, প্রবাসী-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। এ ছাড়া অনেক তরুণ-কিশোরও অংশ নিয়েছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।
স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে তোমাকে একটু পিছনে যেতে হবে। জানতে হবে আরো কিছু কথা। স্বাধীনতার বীজ যে সময় থেকে বপণ হয়েছিলো তাও জানতে হবে। ইতিহাসটি দীর্ঘ। সংক্ষেপে বলি। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর থেকেই বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে।
ব্রিটিশ বণিক লর্ড ক্লাইভ, দেশীয় গাদ্দার মীর জাফর, রায়দুর্লভ, ঘসেটি বেগম তাদের জঘণ্য হীন স্বার্থপরতার কারণে পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত হন আমাদের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ।
ব্রিটিশরা দখল করে ক্ষমতা। লুটে নিতে থাকে আমাদের অর্থ-সম্পদ। বন্ধ করে দেয় আমাদের ঐতিহ্য বিশ্ববিখ্যাত মসলিন কাপড়ের উৎপাদন। জমিদারী প্রথার নামে কেড়ে নেয় কৃষকের জমি। ধর্মের উপর আঘাত হানে। মুসলিম ও হিন্দুদের খৃষ্টান হতে বাধ্য করে।
আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি সব কিছু সাজাতে থাকে তাদের মতো করে। এদেশের মানুষকে সব দিক থেকে বঞ্চিত করে তাদের গোলামে পরিণত করতে চেষ্টা করে। ব্রিটিশদের নানান নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। চারদিক থেকে শুরু হয় বিদ্রোহ।
ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন- শহীদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর দুদু মিয়া, সূর্যসেন প্রমুখ। তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগই ব্রিটিশমুক্ত হয়েছিলো ভারত উপমহাদেশ।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শোষণের নাগপাশ থেকে এ দেশ স্বাধীন হয়। তখন আমাদের দেশের নাম দেয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান। আর বর্তমান পাকিস্তানের নামকরণ হয় পশ্চিম পাকিস্তান। তখন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে একদেশ ছিল। স্বাধীন দেশ পেয়ে এ দেশের লোকজন খুব খুশি হয়েছিলেন। সে সময়ে বাংলাদেশের সাতকোটি মানুষ আশায় স্বপ্ন দেখছিলো। সুন্দর একটি দেশ হবে। দেশের সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠিতি হবে ন্যায়-ইনসাফ ও ইসলামী হুকুমাত।
কিন্তু সে আশা বাংলাদেশের মানুষের পূরণ হয়নি। পাকিস্তানী শাসকরা ক্ষমতা পেয়ে আমাদের উপর চালায় নির্যাতন। শাসনের নামে চলে শোষণ। পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের জীবনমান ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও এদেশের মানুষ চাকুরী-ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
বন্ধুরা তোমরাই বলো- কেউ যদি আমার অধিকার কেড়ে নেয়! শোষণ করে, নির্যাতন চালায় তাহলে কি কখনো তা এক দেশ এক নিয়ম বলা যায়! তুমিও বলবে- না, যায় না। তাই এদেশের মানুষ আবারো রুখে দাঁড়ায়। আসে স্বাধীনতার ডাক। নতুন একটি দেশ গড়ার প্রত্যয়ে মানুষ শ্লোগান তুলে মুক্তিযুদ্ধের।
স্বাধীনতা, নতুন পতকা ও নতুন সীমানা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমে আসে সব শ্রেণির মানুষ। যার যা ছিলো তা নিয়েই শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ।
যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে- শিক্ষিত-মূর্খ, গ্রামের মানুষ-শহুরে মানুষ, কামার, কুমার, তাঁতী, যুদ্ধে নেমে আসে শিশু-কিশোর এমন কি নারীরাও। যে যেভাবে পেরেছে সহযোগিতা করেছে মুক্তি যোদ্ধাদের।
একদিন দুদিন নয়। দীর্ঘ নয় মাস চলে যুদ্ধ। মার্চ থেকে ডিসেম্বর। নয় মাসের এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে ৩০ লক্ষ বাঙালি। দু’লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। তাই মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
যাদের সাহস, ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে অঙ্কিত হয় স্বাধীন বাংলার সীমারেখা। আমরা লাভ করি লাল-সবুজের গৌরবময় পতাকা। তাদের ঋণ কখনো আমরা শোধ করতে পারবো না। তারা অমলিন আমাদের হৃদয়ে- বাংলার ইতিহাসে।
বন্ধুরা! এই স্বাধীনতা, এই পতকা, ৫৬ হাজার বর্ঘমাইলের এই সীমানা আমাদের গর্ব। একে রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমাদের বোধ-বিশ্বাসের ঠিকানা বাংলাদেশ। রূপময় এই মাতৃভূমিকে আরো সুন্দর-সার্থক করে গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আমাদের প্রিয় নবী সা. তার দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন দেশের মানুষকে। পরম মমতায় সব কিছু আগলে রাখতেন। এমনকি গাছ, গাছের পাতা ও পশু পাখিদের বিষয়েও খোঁজ নিতেন।
আমরা সেই মহা মানব- সরদারে দু’আলম প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা.-এর উম্মত; অনুসারী। আমরাও তাঁর আদর্শে আদর্শবান হতে চাই। আমরাও গড়বো দেশ, ভালোবাসবো মানুষকে।
দেশ গড়তে হলে আমাকে মনে রাখতে হবে নিজেকেও গড়তে হবে। তুমি যেভাবে গড়ে উঠবে সেভাবেই গড়ে উঠবে তোমার দেশ। তোমার মাঝে যেমন নীতি-নৈতিকতা আসবে তারই প্রভাব পড়বে সমাজে। তোমার চরিত্র যত সুন্দর সমাজ-রাষ্ট্র তত সুন্দর। তুমি যতটা সমৃদ্ধ চিন্তা করবে দেশ ততটা সমৃদ্ধ হবে।
এই যে সমাজে এখনো অন্যায়-অবিচার চলে!
তোমার আমার চোখের সামনে চলে বিজাতীয় সংস্কৃতি!
অশ্লীল বাদ্য-গানে ঝালাপালা করে কান!
এই সংস্কৃতি কে পাল্টাবে বলো!! কে রোধ করবে নীতি-নৈতিকতার এই মহা-পতন!!
একা তুমিও পারবে না, আমিও পারবো না। প্রয়োজন একটি জাগরণ। দেশ প্রেমের জাগরণ, দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষার জাগরণ। শুদ্ধ চিন্তা জাগরণ। প্রয়োজন সত্য ও সুন্দরের তরে একঝাঁক নিবেদিত প্রাণ মানুষের।
তাহলে এসো বন্ধুরা! আমরা জাগি এবং জাগিয়ে তুলি। ৭১-এর চেতনা হোক আমাদের প্রেরণা। সুন্দর দেশ গড়া ও দেশকে ভালোবাসা হোক আমাদের অঙ্গিকার।

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment