একগুচ্ছ ছড়া

একগুচ্ছ ছড়া

হিজল গাছের তলে
কুলসুম বিবি

সেদিন অমাবস্যার রাতে
হিজল তলার পথে,
নিতাই বাবু যাচ্ছে হেটে
সদাই নিয়ে পটে।

হিজল গাছের ডালে বসে
কাশে বুড়ো ভূতে,
ঠ্যাং নাচিয়ে মুখ ভেংচিয়ে
হাসে ভূতের পুতে।

সাদা শাড়ির আঁচল ছেড়ে
মুন্ডু হাতে করে,
ভূতের বউটা সামনে দাঁড়ায়
পথ আগলে ধরে।

ভূতের ছোট্ট ঝি ও পাশে
দাঁত কেলিয়ে হাসে,
আঁধার রাতে ভূতের ফাঁদে
বাবু মশাই ফাঁসে।

ভূতের ভয়ে কেঁপে কেঁপে
আত্মা উড়ে শ্বাসে,
কোনো মতে জীবন নিয়ে
দৌড়ে ফিরে আসে।

জান বাঁচিয়ে এসে মশাই
কানে ধরে বলে,
জীবন থাকতে আর কভু নয়
হিজল গাছের তলে।

 

শীত এলো
মাহফুজ রুমান খান

গুটি-গুটি পায়ে
শীতের বুড়ি এলো গায়ে
উফ বাবা কি শীত!

শীত যখনি আসে
বুড়ি কুহু করে কাশে
শুরু করে গীত।

শীত কুয়াশার ডরে
খোকা-খুকি থরথর করে
যেন করছে নিত।

 

পথশিশু
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর

ফুটওভারের নিচের দুপাশ
আজকে আমি দেখি ভোরে
পথশিশু আর কুকুর ছানা
কাঁপছে শীতে জোরে জোরে।

হাত দুয়েক গায় ছেড়া চাদর
গায়ে দিয়ে ঘুমায় তারা
মুখ ঢাকিলে পা ঢাকেনা
টেনে টেনে রাত্রি সারা।

মাথার নিচে নেই বালিশ তার
বিছানো নেই কাঁথা-চাদর।
খাট-পালঙ্ক পথের ধুলো
সঙ্গী-সাথি কুকুর বাদর।

কারও গায়ে ছেড়া জামা।
ধুলো ময়লায় হলো কালো
চুল কারও ভাই পাখির বাসা
তাতেই ওরা আছে ভালো।

শীতকালে সব ধনী মানুষ
শীতের কাপড় কিনে দিলে
পথশিশু আর ছিন্নমূলের
শীত থেকে ভাই মুক্তি মিলে।।

মাঘের শীতে
জিহাদুল আলম

মাঘের শীতে ইচ্ছে করে
মামার বাড়ি যাই
পড়ার বই তো এসে গেছে
সময় যে আর নাই।

মাঘের শীতে বাঘ কান্দে
বয়োবৃদ্ধ কয়
এই কারণেও মাঘের শীতে
লাগছে বেজায় ভয়।

মাঘের শীতে সূর্য্যটিা রোজ
দিচ্ছে হেসে কিরণ
বস্ত্রহীনা মানুষগুলো
করতেছে পার জীবন!

ছোট্ট মেয়ে
কুলসুম বিবি

ছোট্ট মেয়ে নেচে গেয়ে
দিনটি করে পার,
নানা রঙের খেলনা পেয়ে
মন ভরে না তার।

নামটি মেয়ের শিলামনি
নিত্য কুড়ায় ফুল,
গলার মালা হাতের বালা
কানে পরে দুল।

পাশের বাড়ির তুলি আসে
সঙ্গে বন্ধুর দল,
সারাবেলা সবাই মিলে
পুতুল খেলার ছল।

পুতুল বিয়ে হবে বলে
সাজায় তারা ঘর,
ঘোড়ায় চড়ে দূরের পথে
আসবে নাকি বর।

সর্ব সুখের স্বর্গ খুঁজি
কাউসার আহমাদ

হৃদয়ে আঁকি তোমার ছবি
ওগো নবি মুহাম্মাদ,
নয়নে দেখি স্বপ্ন ছোঁয়ার
ওগো প্রিয় আহমাদ।

তোমার নামে দরূদ পড়ি
সকাল দুপুর সাঁঝে,
সর্ব সুখের স্বর্গ খুঁজি
নবি তোমার মাঝে।

সালাম জানাই তোমার প্রতি
ভক্তি ভরা মনে,
তোমার নামে ফুল ফুটেছে
আমার মনের বনে।

রওজা পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে
গাইবো তোমার নামে,
পাঠিয়ে দেবো খুব যতনে
করে প্রেমের খামে।

আমরা শিশু
ইবনে আলাউদ্দিন

আমরা শিশু তুলতুলে মন
স্নেহ-মায়ায় করো আপন
আগলে রাখো বুকে
বড়ো হয়ে আমরা সবার
থাকবো সুখে দুখে।

গরীব-দুঃখীর বন্ধু হবো
মাজলুমেরই প¶ে রবো
জুলুমটাকে রুখে।

আমরা শিশু ফুলের মতোন
এখন থেকেই নাও রে যতোন
সবাই বাসো ভালো
জ্ঞানী হয়ে গুণী হয়ে
করবো জগৎ আলো।

দেশ সাজাবো ন্যায়-নীতিতে
গড়বো সমাজ প্রেম-প্রীতিতে
দূর করে সব কালো।

একটি ফুলের জন্য
মাহমুদ হাসান

জুলাই এলো জুলাই এলো
দু’হাজারের চব্বিশে
জুলাই এলো ফাগুন হয়ে
দাবানলের আগুন হয়ে
স্বৈরাচারের বুক পিষে।

জুলাই এলো ক্রুদ্ধ হয়ে
স্বাধীকারের যুদ্ধ হয়ে
একটি ফুলের জন্য
ফুল নয় সে ফুল নয় সে
ফুলের মতো বন্য।

বুকের তাজা রক্ত পেলে
তবেই এ ফুল পাপড়ি মেলে
নতুন করে বাঁচে
রক্ত-প্রাণের চেয়েও এ ফুল
দামী সবার কাছে।

সবাই মিলে রক্ত দিয়েই
বাঁচালো এ ফুলকে
জানো জানো সবার প্রিয়
অমূল্য এ ফুল কে?

এই ফুলটি অনেক আপন
তোমার আমার চেনা
এই ফুলটি স্বাধীনতা
রক্ত দিয়ে কেনা।

নতুন দিনের গল্প
মুহাম্মদ শেখ মূসা

আমরা তরুণ অরুণ হয়ে
উঠলে জেগে পুবে
নতুন করে হাসবে ভুবন
সকল আঁধার ডুবে।

নতুন দিনের গল্প লিখি
লাল-সবুজের বুকে
সভ্য-জাতির দীপ্ত প্রদীপ
থাকবে সবার মুখে।

আমরা হবো ফুটন্ত ফুল
দূর করে সব ভ্রান্তি ও ভুল
রাখব না ক্রোধ জমা,
প্রতিশোধের বিপরীতে
দেবো পরম ¶মা।

নতুন দিনে পণ করেছি
মানবো নাকো বাঁধা
সত্য-ন্যায়ের প¶ হবো
দিলকে করে সাদা।

 

ড.শহীদুল্লাহ আনসারী সংগীত
আল্লাহ রাসূল পথ ধরে

বিপ্লব চাই, বিপ্লব করো,ভাই
আল্লাহ রাসূলের পথ ধরে
সত্য সুন্দর সমাজ গড়ে দাও
রক্ত ঝরবে-যাক ঝরে।

রক্ত দিয়েছেন নবী রাসূলগণ
তুমিও দাও সমস্যা কী
নশ্বর পৃথিবীর সুখের আশায়
অনন্তকাল জ্বলবে নাকি!

আখিরাতের সুখের রাস্তা বাঁধো
পৃথিবীর সব থাক পরে।

পূত-কন্ঠে প্রতিদিন সুরেলা হোক
মহাগ্রন্থ আল কোরআন
হাদিস পালন করে দেখ ভাই
পাবেই সুখ অফুরান,
অমর অক্ষয় সুপথ সন্ধানী মতো
দাও পাঠিয়ে ঘরে ঘরে।

 

নতুন বছর
যুবায়ের আল মাহমুদ 
বছর ঘুরে এলো আবার
নতুন একটি সন
ভালো হওয়ার করেছি আজ
আমরা সবাই পণ।
সবার মুখে অনুরণিত
নও জীবনের সুর
গ্লানির খোলস উপড়ে, পরে
আসবে নতুন ভোর
আলোক আভায় ভরে যাবে
থাকবে না যার শেষ
গড়বো আমরা নতুন করে
সোনার বাংলাদেশ
খেজুর রসের লোভ
এম আর মাহফুজ 
শীত সকালে মিষ্টি হাওয়া
গাছে চড়ে গাছি।
খেজুর রসের লোভে আমরা
গাছের নিচে আছি।
কাস্তে হাতে চড়লো গাছি
সঙ্গে নিয়ে হাঁড়ি।
খেজুর রস খেয়েই তবে
ফিরে যাব বাড়ি।
গাছি ভায়া রস পেরে,
একটু দিল খেতে।
রসের স্বাদে, আনন্দেতে
মন উঠলো মেতে।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ আসে
নেই তো কোনো ¶োভ।
প্রতিবছর শীত এলেই
শুধু, খেজুর রসের লোভ।
নববর্ষের গান
এম আর মাহফুজ  
নতুন বছর নতুন দিন
বাজলো মনে খুশির বীণ
জুড়িয়ে দিল প্রাণ।
চারদিকে উঠলো বেজে
নববর্ষের গান!
ফুল কাননে ফুলের মেলা
ভ্রমর উড়ে করছে খেলা
পাখির কলতান।
চারিদিকে উঠলো বেজে
নববর্ষের গান!
বিহঙ্গ সব যাচ্ছে ওড়ে
মিষ্টি মধুর গানের সুরে
মন করে আনচান।
চারিদিকে উঠল বেজে
নববর্ষের গান!
শীতকালের ছবি 
আমিনুল ইসলাম সৈকত 
শীত নেমেছে হিমেল বায়ু
জানিয়ে দেয় চিঠি,
সকাল হলে রোদের ছটা
হাসে মিটিমিটি।
শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে
স্নিগ্ধ রোদের ছন্দ,
ভালো লাগে নতুন চাল আর
নানান পিঠার গন্ধ।
শীতের দিনে নানান পুষ্প
মাতায় বাড়ি ঘ্রাণে,
খেজুর রস আর ফিরনিপুলি
জাগায় আমেজ প্রাণে।
এত কোমল সুখের মাঝে
সংশয় জাগে বুকে,
গরীব দুখী দিনমজুরের
শীতটা কাটে দুখে।
শীতের পিঠে 
ফেরদৌস জামান খোকন 
শীতের পিঠে খুব যে মিঠে
স্বাদটা ভোলা দায়,
খেজুর রসে সিক্ত পিঠে
হারাল কই হায়!
মায়ের হাতে পিঠে খেতাম
পেটটা ভরে ভাই,
নানা ঢঙের পিঠের মজা
তুলনা তার নাই।
খেজুরের রস খেতাম সবে
সকাল বেলা রোজ,
মুড়ির সঙ্গে খেজুর গুড়ের
আহা মজার ভোজ!
সিদ্ধ পুলি পাটিসাপটা
হরেক রকম নাম,
মায়ের হাতে তৈরি পিঠার
ছিল জানি দাম।
শীতের দিনে পিঠে পায়েস
খেতে মনে চায়,
ইচ্ছে করে পিঠা খেতে
ফিরি আবার গাঁয়।
শীতের খেজুরের রস 
মো. আব্দুল ওহাব 
খেজুর গাছে উঠে দাদু
ভোরের আলো মাখে,
গাছের গায়ে দোয়াতি কেটে
রসের টিপ টিপ সাঁকে।
পাত্র ভরে মিঠে রসে
শীতের সকাল মজা,
রাফি বলে, গুড় বানালে
দাও না আমায় সাজা!
ভাপা পিঠা, দুধের সঙ্গে
রসে ভেজে খাই,
মিষ্টি মধুর শীতের এই সকাল
রসের গুণেই ভাই।
গাছি দাদু হাসি দিয়ে
বললেন মধুর গান,
খেজুর রসের মজা পেতে
শীতকালে করো ধ্যান।
পরিচয় ভুলে
ইবরাহিম হাসান হৃদয় 
পরিচয় ভুলে আমরা এখন
গিয়েছি বহু দূরে
বলছি কথা শেখানো ভাষায়
পশ্চিমা ওই সুরে,
বীরের জাতি আমরা তবে
ভুলেছি আপন কাজ,
সিংহ ছিলাম ধরেছি এখন
খেক শেয়ালের সাজ।
গেছে হারিয়ে ঈমানী চেতনা
দীন ইসলামের টান,
কুরআন ভুলে গাইছি এখন
কুফুর তন্ত্রের গান।
চিনবো কবে জানবো কবে
উঠবো কবে জেগে,
আমরা কবে ছুটবো বলো
তীব্র আলোর বেগে?
মানুষ মারার শব্দ 
নাঈমুল হাসান তানযীম 
কানফাটানো তুমুল আওয়াজ
শহরটা স্তব্ধ,
মায়ের কথা এসব নাকি
মানুষ মারার শব্দ।
বাবা বলেন, চুপ করে থাকো
পড়াতে হও মগ্ন,
কীসের এতো পড়াশোনা!
মনটা পুরাই ভগ্ন।
সঙ্গী সাথী নামছে মাঠে
বলছে মরার পণ নে,
বুক ফুলিয়ে রাজপথে আয়
অধিকারের জন্যে।
তাদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে
এই লড়াইয়ে থাকতে,
চুপটি করে যাই বেরিয়ে
নিজকে শামিল রাখতে।
শুনি, শহীদ আবু সাঈদ
মুগ্ধ এবং দীপ্ত,
এসব খবর শুনে কেবল
হয়ে উঠি ¶িপ্ত।
চোখে আগুন বুকে আগুন
আগুন লাগে রক্তে,
এই আগুনের ছিটা লাগে
স্বৈরাচারীর তখতে।
ছুঁড়ে বুলেট স্বৈরাচারী
মারে হাজার ছাত্র,
রক্তে তাদের যায় কেটে এই
ঘন কালো রাত্র।
নতুন করে এই ইতিহাস
হলো পাতায় যুক্ত,
বাংলাদেশ আজ মুক্ত স্বাধীন
জুলুম শোষণ মুক্ত।
Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য