সাংবাদিক

সাংবাদিক

 

 

অভি খুব খুশি আজ। বাড়ির অন্যদের সামনে ভাব নিয়ে হাঁটে। কথা বলে। কাউকেই আজ তোয়াক্কা করছে না। খেলার সাথীদেরও না। সময়ের ব্যাবধানে যাদের সাথে মিশতে হবে। কথা বলতে হবে। ঝগড়া করতে হবে। তাদের কাউকেই যেনো ও চিনছে না। কারণটা কি? মামা এসেছেন ওদের বাসায়। বেড়াতে। মা রাজি হলে মামার সাথে নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে।

মামার হাত ধরে হাঁটতে বেরিয়েছে হাসান। এতোদিন ঘটে যাওয়া এলাকার কিছু কাহিনী শুনাচ্ছে সে মামাকে। মামা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে ভাগ্নের কথা। ‘মামা জানো, সেদিন কী ঘটেছে?’ এই বলে মামার দিকে তাকালো অভি। মামা রাকিব হাসান ভাগ্নের দিকে মুখ করে বললেন, ‘কীভাবে জানবো। তুই তো বলিসনি।’ মামার আঙ্গুলটা টাইট করে ধরে বলল, ‘আমি আর তানু মিলে একটা ঘুড়ি বানিয়েছি। সেটা দেখতে পুরো চঙ্গা ঘুড়ির মতো। তবে ছোট। তানু আম্মুর কাঁথা সেলাই করার সুতো নিয়ে এসেছে। চুরি করে।

ও মামা! আম্মুর বা ঘরের কিছু না বলে নিলে চুরি হবে?’ মামা ভাগ্নের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির দিকে তাকালো। বলল, ‘আগে দেখতে হবে জিনিসটা কী? যদি এমন জিনিস না বলে নিস যেটা খুব বেশি মূল্যবান না। অথবা না বলে নিলে আব্বু আম্মু রাগ করবেন না। তাহলে সেটা চুরি হবে না। যেমন আম্মুকে না বলে পানি খেলি। ভাত খেলি। কোনো ফল খেলি নিজেদের গাছের। আর যদি এমন জিনিস হয়, যেটা মূল্যবান। এমনকি সেটার জন্য তারা হা হুতাশ করবে কে নিল, তা খুঁজবে। তাহলে সেটা চুরি হবে। যেমন আম্মুর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে না বলে একশ টাকা নিলি। আব্বুর পকেট থেকে পাঁচশ টাকা না বলে নিলি। নেয়ার সময় কিন্তু তোর নিজেকে চোর-চোর মনে হবে। এগুলো চুরি হবে।’

না, মামা আমি টাকা নিইনি কখনো। এই একটু সুতো টুতো নিই। আম্মুর ওই সুতো দিয়েই ছেড়েছিলাম ঘুড়িটা। অনেক দূর উঠেছিল। আমার সেই কী আনন্দ। তানু আনন্দে লাফাচ্ছিল।’ মামা অভির কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকিয়ে দিলেন৷ ‘তুই তানিয়াকে বারবার তানু বলিস ক্যা? ও এতে রাগ করে জানিস না?’ মামা বললেন। থাক মামা ওকে আর তানু বলব না। বলা শুরু করল অভি। মামা তারপর না, ঘুড়িটা খুব টানতে শুরু করল। ভাবলাম আরো সুতো চাচ্ছে বোধহয়। তানিয়াকে বললাম, যাও আপু আম্মুর আরো একটু সুতো নিয়ে আসো। আম্মু না যেনো না দেখে। ও দৌড় দিল। নাটাই আমার হাতে। হঠাত মাঝখান থেকে সুতো ছিড়ে ঘুড়ি হাতছাড়া হয়ে গেল। আমি চিল্লান দিলাম তানু বলে। ঘুড়ি গেছে। ঘুড়ি গেছে। তানিয়া বাড়ি পৌছতে পারেনি। আমার ডাক শুনে চলে আসল।

 

আমরা দেখলাম, ঘুড়িটা উড়তে উড়তে গাছগাছালির ওপর দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল। তানিয়া বলল, ‘ভাইয়া এই ঘুড়ি লাইলন সুতো দিয়ে উড়ায়।’ ‘ঘুড়ি খুঁজতে গিয়েছিলি?’ মামা বললেন। ‘হু, মামা । শোনই। আমরা দু’জন ইন্নালিল্লাহ পড়তে পড়তে নিশানা ঠিক করে খুঁজতে লাগলাম। আম্মু বলেছেন কিছু হারিয়ে গেলে ইন্নালিল্লাহ পড়ে খুঁজলে পাওয়া যায়। তার টেস্ট করছিলাম। একটা বাড়ি পেরিয়ে আরেক বাড়ি যেতেই দেখি গাছের মাথায় সুতোর মতো। লাল সুতো। এই তো আম্মুর সুতো। আরেকটু সামনে এগুলাম। বাহ! দেখলাম ঘুড়ি ব্যাটা টান হয়ে শুয়ে আছে। তানিয়া ঘুড়িটা নিল। আমি সুতো বটতে লাগলাম।’

মামা-ভাগ্নে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসেছে। ‘তুই বড় হলে কী হবি?’ মামার প্রশ্ন। ‘সংবাদিক হমু।’ এক কথায় জবাব অভির ৷ ‘কেনো? সাংবাদিক হবি কেনো?’ মামার প্রশ্ন। ‘আরে তুমি দেখছি বোকা। আমাদের মতো ছোটদের জীবনে কত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তা কোনো সাংবাদিক লেখে না৷ পত্রিকায়ও দেখি না। তারা ছাপে না। আমার জীবনেই তো কত ঘটনা ঘটল। কোনো সাংবাদিক এল? রিপোর্ট করল? করেনি। আমি এসব তুলে ধরব সাংবাদিক হয়ে।’ ‘বেশ। সমাজের অসঙ্গতি, দেশ ও জাতি নিয়ে লিখবি না?’ ‘হু। ওটা তো এমনিতেই লিখতে হবে। এটা হল মূল।’ ‘হলুদ সাংবাদিক হোস না যেনো।’ ‘সেটা কেমন? হলুদ নিয়ে লেখালেখি করা? নাকি হলুদ রঙ নিয়ে?’ ‘আরে না। হলুদ সাংবাদিক হল, যারা সাদাকে কালো। আর কালোকে সাদা বানায়। আসল ও সত্য তথ্য গোপন বা এড়িয়ে গিয়ে মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে রিপোর্ট করে। আর সাংঘাতিকও হইস না।’ ‘তুমি বেশি কথা বল মামা। আমার নিয়ত খাঁটি। ওসব না।’ ‘ওই দেখ তোর মা ডাকছে খেতে। চল…

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য