দুনিয়ার বুকে একদিন তিনি হেঁটে চলেছেন। তিনি যেখানে হেঁটেছেন সেই পথকে বলেছি-ধন্য তুমি! তোমার বুকে হেঁটেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। মাটির দিকে তাকিয়ে বলেছি- সেই মাটি, সেই বালু! পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বলেছি- তুমি আজও তেমন আছো যেমন ছিলে তাঁর সময়ে। যখন সেইসব পথে হেঁটেছি অনুভব করেছি তাঁর সময়ে কেমন ছিল এইসব পথ।
যখন এসি বাসে করে অত্যন্ত আরামের সাথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি, তখন ভেবেছি আপনিও এই পথ ধরে গেছেন উটের পিঠে চড়ে। আমি সেই তীব্র তাপদাহে তাঁর কষ্টটা অনুভব করার চেষ্টা করেছি। যদিও আমার কল্পনার চেয়ে আপনার কষ্টের মাত্রা ছিল প্রখর। আমার হৃদয় কেঁদেছে এতোটা পথ আপনি এসেছেন। জীবনে আপনার কষ্টের কাছে আমাদের জীবনের কষ্ট তুচ্ছ। আমি যখন মদীনা শহরে প্রথম দেখেছি অঝোরে চোখ থেকে পানি ঝরেছে। আমি যখন প্রথম স্পর্শ করেছি মাটি, তখন মনে হয়েছে আমি শান্তির শহরে এসেছি। আপনার শহর এটা। আমার ভালোবাসার মানুষের শহর এটা। এই শহরের প্রতিটি কোণায় আপনার স্পর্শ। তাই আমি স্পর্শ করেছি এখানে গাছ, ছুঁয়েছি মাটি।
আমি যখন দূর থেকে সবুজ গম্বুজ দেখেছি, তখন কেঁপে উঠেছি। পড়েছি দরূদ। আমার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা মোবারক এখানে। সুগন্ধির এই শহরে মোহনীয় আবেশে কেটেছে বেলা। কখনও কেঁদেছি। কখনও ফুঁপিয়ে কখনও নীরবে চোখের জল ফেলে। চলে আসবো যখন তখন মনে হয়েছে জীবনে যা যা অর্জন ছিল সব দিয়েও যদি থেকে যেতে পারতাম! কাঁদতে কাঁদতে হাতে থাকা পিডিএফ-এর একটা ই-বুকে পড়েছি আমার নবীজি উদগ্রীব হয়ে আছেন আমাদের সাথে দেখা করার জন্য।
আমার ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করছে। সাহাবিরা বললেন, আমরা কি আপনার ভাই নই?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা তো আমার সাহাবি, অর্থাৎ সঙ্গী। আমার ভাই হলো, যারা আমার ওপর ঈমান আনবে, কিন্তু আমাকে দেখবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সাহাবীরা তো তাঁকে দেখেছেন, তাঁকে ভালোবেসেছেন, সাহচর্য পেয়েছেন আর আমরা সরাসরি তো তা পাইনি। তবুও আমরা না দেখে তাঁকে ভালোবাসি। তাঁর ইন্তিকালের পর যারা তাঁকে ভালোবাসেন তাঁদের সাথে তিনি সাক্ষাত করতে চান। তাঁদেরকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন। মনে হয়েছিল আমার হৃদয়ে চলে যাওয়ার ক্ষত ছিল আল্লাহ ক্ষত নিবারণকারী হিসেবে এটা পড়ার সুযোগ দিয়েছেন। কারণ আমার কান্না থামছিল না। ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনাকে আমি ভালোবাসি আমার সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা কিংবা ভাইবোনের চেয়ে। আপনাকে যে ভালোবাসে আমি তাঁকেও ভালোবাসি। আপনি আমার মালিকের রাসূল।
আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন- সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে। আপনি এসেছেন জ্বিন ও মানবজাতির জন্যে। আপনি এমন একজন- যিনি তাঁর উম্মতের গুনাহ মাফের জন্য প্রতি নামাজে দোয়া করেছেন।
আপনি উম্মতের কল্যাণের চিন্তায় পেরেশানীতে থাকতেন। আল্লাহ আপনাকে বুঝ দিলেন এইভাবে “ওই সব লোক ঈমান আনছে না, এ কারণে কি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে আপনি নিজেকে শেষ করে দেবেন।”
উম্মতকে ভালোবেসে আল্লাহর কাছে চেয়ে এনেছেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। উম্মতের পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ পড়া কঠিন হবে। উম্মতের জন্য তাঁর ভালোবাসা অপরিসীম।
প্রিয় নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব:
নবীর সুন্নাতগুলোকে জাগ্রত করা অর্থাৎ আমলগুলো খুঁজে বের করা আর সে অনুযায়ী আমল করা। অধিক হারে দরূদ পাঠ করা। যে ব্যক্তি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাঁর প্রতি দশবার রহমত নাজিল করেন।
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাযিআল্লাহ্ আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ে থাকি। আমি আমার দুআর কতটুকু সময় আপনার দরূদে ব্যয় করব? নবীজি বললেন, যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ? বললেন, তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর চেয়ে বেশি করো, তাহলে তোমার জন্য তা কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? বললেন, তোমার ইচ্ছা। তবে যদি তুমি এরচে বেশি করো তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? বললেন, তোমার ইচ্ছা। তবে তুমি যদি এর চেয়ে বেশি করো তাহলে তা তোমার জন্যই ভালো হবে। আমি বললাম, আমি আমার দুআর পূর্ণ সময় আপনার দরূদে অতিবাহিত করব। নবীজি বললেন, তাহলে তোমার (দুনিয়া-আখিরাতের) প্রয়োজন পূরণ হবে, পেরেশানী দূর হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১২৪২
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।