হিজরি নববর্ষের গল্প

হিজরি নববর্ষের গল্প

 

জরুরি সভা ডেকেছেন আমিরুল মুমিনিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। উপস্থিত হয়েছেন মদিনার বিশিষ্টজনরা সকলেই। ওসমান গনি, আলী মুর্তজা, তালহা, জুবায়ের, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুম খলিফার পাশে বসা। গল্পটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের ষষ্ঠ বছরের। তখন ইরাকের গভর্নর ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী আবু মুসা আশয়ারী রাদিআল্লাহু আনহু। চিঠি পাঠিয়েছেন খলিফা ওমরের দরবারে। জানিয়েছেন খলিফার প্রেরিত তারিখ বিহীন চিঠিপত্র নিয়ে তার  পেরেশানির কথা। অভিযোগ করেছেন, এত বড় রাষ্ট্রের  নির্ধারিত বর্ষপঞ্জি নেই, ফলে দায়িত্বশীলদের পোহাতে হয় বহু ঝক্কি ঝামেলা, দ্রুত এর সমাধান বের করা উচিত। এতদিন যে যার মত তারিখ গণনা করত। বিশেষ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে করেই হত তাদের বর্ষ গণনা । গোত্র-ভিত্তিক সমাজে এরচেয়ে বেশির প্রয়োজনও পড়তো না। এখন সময় বদলেছে। গোত্র রূপ নিয়েছে রাষ্ট্রে। আগেকার নিয়মে যে  এই বৃহৎ রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়, তা খলিফাও উপলব্ধি করলেন। তাই আয়োজন করলেন পরামর্শ সভার। একে একে নানান মত আসতে লাগলো। রোমানদের বর্ষপঞ্জি অনুসরণের প্রস্তাব এলো। পারসিক অথবা ইহুদিদের পঞ্জিকাও অনুসরণ করা যায় বললেন কেউ কেউ। আমিরুল মোমেনীন সবগুলো  প্রত্যাখ্যান করলেন বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে। স্মরণ করিয়ে দিলেন বিধর্মীদের সংস্কৃতি গ্রহণের ব্যাপারে নবীজির কঠোরতার কথা। বললেন মুসলিমদের সবকিছুতেই যেমন স্বকীয়তা রয়েছে, ব্যতিক্রম হবে না এখানেও। আজ থেকে নিজস্ব বর্ষপঞ্জি থাকবে আমাদের। খলিফার এমন সিদ্ধান্তে অকুন্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করলেন সবাই। এবার প্রশ্ন উঠলো এর সূচনা হবে কোত্থেকে? মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর বরকতময় জন্ম থেকে শুরু করার পরামর্শ এল। নবুওয়াত, হিজরত, মৃত্যু তারিখ সহ নানান প্রস্তাব এলো। আলী রা. মুখ খুললেন, বললেন ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পঞ্চম বর্ষে খ্রিস্টানদের সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন। নবীজির নির্দেশে সেখানে আমি তারিখ লিখতে গিয়ে হিজরতের পঞ্চম বছর লিখেছিলাম। তাই আমার মনে হয় আমরা প্রিয় নবীর অনুসরণে হিজরত থেকে গণনা শুরু করতে পারি।’ আলী রা. মতেই ফায়সালা হল।

বাদ রইলো শুরুর মাস কোনটা ধরা হবে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের মাস রবিউল আউয়াল, তাই এ মাস থেকে শুরু করা হোক এমন প্রস্তাব করলেন কয়েকজন । বরকত ময় রমজান মাস থেকে শুরু করার প্রস্তাব এলো। ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন মহররম থেকেই শুরু হোক, কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়ালে হিজরত করলেও মহরমেই সাহাবায়ে কেরামকে মদিনা হিজরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং স্বীয় হিজরতের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। ওসমান রা. এর মতকে সমর্থন করলেন হযরত আলীও। অবশেষ ওমর রা. এটাই ফয়সালা করলেন। বললেন, ‘আমাদের বর্ষ গণনা হিজরত থেকে শুরু হবে। আর এর শুরুর মাস হবে মহররম।’ বৈঠক শেষ হল। মহান রবের শুকরিয়া আদায় করলেন সবাই। বাহবা দিলেন আমিরুল মোমেনীনকে। হিজরী বর্ষ এযে ওমরের অমর কীর্তি।

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য