আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুমিনকে যে কোনো বিপদই স্পর্শ করুক না কেন আল্লাহ তার বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেন। এমনকি (চলতি পথে) পায়ে যে কাঁটা বিঁধে (তার বিনিময়েও গুনাহ মাফ করা হয়’)।
[বুখারী : ৫৬৪০; মুসলিম : ৬৭৩০]
পার্থিব জীবনে মুমিনকে যত ছোট কষ্ট আর বিপদই স্পর্শ করুক না কেন, সেই কষ্টের মাঝে আল্লাহ তার কোনো না কোনো মঙ্গল নিহিত রাখেন। আমরা বুঝি আর না বুঝি আল্লাহ আমাদের ভালোবাসেন বলেই এমন সব পরীক্ষায় ফেলেন। তাই আমাদের কর্তব্য হবে, কোনো বিপদে পড়লে বিচলিত কিংবা অধৈর্য না হয়ে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা। তাঁরই শরণাপন্ন হওয়া এবং ধৈর্যশীল বান্দার পরিচয় দেয়া।
এই ধৈর্যকে আরবিতে বলা হয় ‘সবর।’ সবর মানুষের একটি ভিতরগত উত্তম স্বভাব, যার মাধ্যমে সে অসুন্দর ও অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকে। এটি মানুষের এক আত্মিক শক্তি যা দিয়ে সে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে পারে। সবর আল্লাহর পরিপূর্ণ মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ যাকে এ গুণ দেন; শুধু সেই এ গুণে সুসজ্জিত হয়।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নব্বই জায়গায় সবরের কথা বলেছেন। অতএব বন্ধুরা, ভেবে দেখো সবর কত গুরুত্বপূর্ণ!
আল্লাহ সবরকে এমন এক শক্তি বানিয়েছেন যা কখনো ব্যর্থ হয় না, এমন তীর বানিয়েছেন যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না, এমন বিজয়ী সৈনিক বানিয়েছেন যে কখনো পরাজিত হয় না, এমন সুরক্ষিত দুর্গ বানিয়েছেন যা কখনো ধ্বংস হয় না।
সবর আর বিজয় যেন দুই আপন ভাই। যে সবর করবে সফলতা বা বিজয় তার পদচুম্বন করবে। মানুষ তার দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে সবরের মতো এমন কোনো অস্ত্রে সজ্জিত হয় না, যা তার নফস ও শয়তানকে নিশ্চিতভাবে হারিয়ে দেয়। সেই বান্দার কোনো শক্তিই নেই, যার গুণাবলির মধ্যে সবর তথা ধৈর্য নেই। সেই বান্দা বিজয়ও ছিনিয়ে আনতে পারে না যে সবরকারী বা ধৈর্যশীল নয়। তাইতো আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন,
‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধরো ও ধৈর্যে অটল থাকো এবং পাহারায় নিয়োজিত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও।’
{সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত : ২০০}
আমাদের জীবনে সবরের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর বান্দা মাত্রেই সবর করতে হবে। কেননা, কখনো আল্লাহর আদেশ মানতে হবে, তাঁর নির্দেশিত কাজ করতে হবে। আবার কখনো তাঁর নিষেধ মেনে চলতে হবে, বিরত থাকতে তা করা থেকে। আবার কখনো সহসা তাকদীরের কোনো ফয়সালা এসে পড়ার কারণে বিপদে পড়তে হবে। তখন সবর করতে হবে। যখন নেয়ামত দেয়া হবে, তখন শুকরিয়া করতে হবে। এভাবে নানা অবস্থার মধ্য দিয়ে মুমিনের জীবন অতিবাহিত হয়। সুতরাং মৃত্যু পর্যন্ত এই সবরকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে।
আল্লাহ যেমন বলেন,
‘আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে’।
{সূরা: আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫}
আল্লাহ আমাদের সকলকে সবরের মতো মহৎ গুণের অধিকারী করুন। আমাদেরকে ধৈর্যশীল বান্দা হবার তাওফীক দান করুন। আমিন।