ছোটকাল থেকেই গ্রাম ভালোবাসি। কিন্তু পড়া-লেখার স্বার্থে সেই ছোটকালেই গ্রাম ছেড়ে শহরে পা রেখেছি। আর এখন এতটাই শহরকেন্দ্রিক হয়ে গেছি যে, শহর ছেড়ে কোথাও গেলে জীবন যেনে থেমে যায়। তাই জীবনের গতি ফিরে পেতে হলে এই শহরের কাছেই আবার ফিরে আসতে হয়। যারা শহুরে জীবনে অভ্যস্ত তারা এমনই হয়। দীর্ঘ বিরতির পর আবার শহরে ফিরে এসেছি। এখানে ছাদ আছে। চার দেয়ালের আবদ্ধ জীবনে এই এক টুকরো ছাদ বড় প্রশান্তির।
রাতে যখন চারিদিকে নীরবতা নেমে আসে এবং ভোরে যখন প্রকৃতি তার কোমল রূপকে আরো কোমল করে মেলে ধরে, তখন ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির মনোরম আয়োজনগুলো উপভোগ করতে আমার অন্য রকম ভালো লাগে। এর আগে যেখানে ছিলাম, সেখানের রূপ-প্রকৃতি পুরোটাই শহরের ছিলো। কিন্তু এখন যেখানে আছি, শহর হলেও এখানে গ্রাম্যপ্রকৃতির হালকা ছোঁয়া আছে। মুগ্ধ হওয়ার মতো। কাছে-দূরে গাছ-গাছালীর ছায়া আছে, ফাঁকে ফাঁকে অবারিত মাঠ আছে আর আছে কিছু খাল ও পুকুর। ছাদ থেকে এ দৃশ্য আরো সুন্দর লাগে। আরো ভালো করে উপভোগ করা যায়। শরীরের নিস্তেজ ভাবটা দূর করে একটু সজীবতা আনার জন্য প্রতিদিনের মতো আজও ছাদে উঠলাম। আজকে একটু দেরী হয়ে গেছে। সূর্যের কোমল আলোয় হেসে উঠেছে যেন সব। চতুর্দিকে যেন মুগ্ধতার ছড়াছড়ি। দূর থেকে বাতাসে হেলেদুলে কাশফুলেরা যেন কাছে ডাকছে হাতছানি দিয়ে। শহরের পাশে এত বিস্তৃত কাশবন সত্যিই দারুণ! এ সৌন্দর্যের টানে মানুষ অবসরে এখানে এসে ভিড় করে। যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ দূর করতে ছুটে আসে। হাত বাড়িয়ে সাদা সাদা কাশফুলের ছোঁয়া নেয়।ভালো হতো, যদি এই শুভ্র কাশফুল থেকে তারা শুভ্রতার শিক্ষা নিতে পারতো!
চিরচেনা একটি দৃশ্য আজ নতুন করে আমাকে নাড়া দিলো। আগেও দেখেছি,তবে আজকের মতো অনুভূতি জাগে নি কখনো। কাছের ঐ আরেকটি ছাদে পৎ পৎ করে উড়ছে একটি লাল-সবুজ পতাকা। উড়ন্ত এই পতাকার শব্দ, এই পতাকার প্রেম হৃদয়ে ঢেউ তোলে, মনের গভীরে ঝড় তোলে। সময়ের নির্মম বাস্তবতায় ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, এ ঝড় আনন্দের না আশঙ্কার!!