হিজরত করলেন ওমর
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবীজি ইঙ্গিত পেয়েছিলেন-তিনি শীঘ্রই হিজরত করবেন। সারি সারি খেজুর গাছ যে দেশে-মক্কা ছেড়ে সেই দেশে যাবেন তিনি।
যারা মক্কায় প্রতিদিন কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হতেন গোপনে নবীজি তাদের ওই দেশে হিজরতর অনুমতি দেন। আবু সালমা মদীনায় যান আকাবার শপথের প্রায় এক বছর আগে। কথাটা জানাজানি হলে গোপনে রাতের আঁধারে আরও অনেকেই চলে যান মদীনায়।
ওমর।
মক্কার বীর।
তাঁকেও তখন নানান বাধার মুখে পড়তে হয়।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন-না, আর থাকব না মক্কায়। যারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাদের জানালেন। তারাও একমত। না, এভাবে আর থাকা যায় না। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আগে যারা হিজরত করেছেন-সবাই গোপনে গোপনে মক্কা ছেড়েছেন। ওমর বীর। গোপনে দেশ ছাড়বেন কেন? তিনি বন্ধু-বান্ধব আত্নীয়-সজনসহ বিশজনের বিশাল দল নিয়ে দিনের বেলা মক্কা ছাড়েন।
এরপর শুরু হয় স্রোত।
অল্প কিছু দিনের মধ্যে মক্কা বিরান হয়ে পড়ে।
নবীজি আবু বকর আর আলী আছেন মক্কায়। আর আছেন কিছু-অসহায় মুসলমান। তারা গোলাম কিংবা কিশোর। তাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে।
[ইবনে কাসীর, আল বিদায়াহ: ৩: ২০২-২০৩]
মন মরে যায় আবু জাহেলদের
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এক সঙ্গে হয় দুষ্টের দল। তাও আবার কাবার চত্বরে। দল পাকায় দিনভর। এই করব, সেই করব। কিন্তু ঘুম থেওেক উঠেই শুনতে হয়-আজ আমের ইবনে রাবীয়া নেই, আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ নেই, তার ভাই আবু আহমাদ ইবনে জাহাশ নেই। আরেকজন এসে সংবাদ দে-
ও নেতারা শুনছ? উককাশার ঘর খালি,ওয়াহহাবের দুই ছেলে শুজা এবং ওকাবাও ঘরে নেই। আরবাদ ইবনে হুমায়রাও নেই।
হ্যাঁ হ্যাঁ, মেয়েরাও শুনছি মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। জাহাশের তিন কন্যা যায়নাব, ইম্মে হাবীবা, হাসনারা মদীনায় চলে গেছে।
আবু জাহেলের মথা ধরে আসে।
আর শুনতে ইচ্ছে করে না। এভাবে দিন দিন সব শিকার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ওমর দিনের বেলা বিরাট দল নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওরা কি সেখানে গিয়ে বসে থাকরব! ওদের দল বাড়ছে, আরও বাড়বে।
তারপর?
আর ভাবতে পারে না আবু জাহেলরা!
ও নেতারা, একটা কিছু করুন। সব তো চলে গেল। মক্কার বসাতির পর বসতি শূন্য। এইভাবে ছেড়ে দিলে লাই পেয়ে যাবে। শুনেছি, মদীনার লোকেরা দলে দলে মুসলমান হচ্ছে। এখান থেকে যারা পালিয়ে যাচ্ছে তারা ওখানে জামাই-আদরে আছে।
না, আর বসে থাকব না! অনেক ছাড় দিয়েছি মুহাম্মদকে আর না। এদিকে আবু বকরও পেরেশান!
মক্কার মতি-গতি ভয়ানক! এখানে আর এক মূহূর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না তার!
: ইয়া রাসূলাল্লাহ!
: আবু বকর!
:অনুমতি হলে আমিও মদীনায় চলে যাই!
:একটু অপেক্ষা করো। আল্লাহ হয় তো তোমাকে কোন সঙ্গী দেবেনÑতুমি তার সঙ্গে হিজরত করবে!
আবু বকর মনে মনে ভাবে-ওই সঙ্গীটি যদি আমার নবী হতেন।
[ইবনে হিসাম: ২:৭৯]
দরবারে বসেছে দাওন নাদওয়া
দারুন নাদওয়া- মক্কার পার্লামেন্ট। মক্কার সর্বোচ্চ পরিষদ এটা। এই দরবারে যা সিদ্ধান্ত হয় সবাইক তা মাথা পেতে নিতে হয়। কুসাই ইবনে কিলাবের বাড়িতে এই দরবার বসে নিয়মিত। আজও বেেসছে! সবাই চোখে মুখে অস্থিরতা!
মুখে মুখে গুঞ্জরণ-এখন মুহাম্মদের বিরাট দল!
হ্যাঁ, আগে তো শুধু মক্কার কিছু লোক তার দলে ভিড়ে ছিলো। আর এখন তো বাইরেও তার বিশাল দল!
লক্ষণ ভালো নয়!
তা তো বুঝাই যাচ্ছে। যে কোন সময় মুহাম্মদ ওখানে চলে যাবে। তারপর দতলবল সহ আমাদের উপর হামলা করতে পারে! যার যার মতো কথা বলছে তারা।
এমন সময় সেখানে হাজির!
হ্যাঁ, সরাসরি শয়তান! এমন ভয়ংকর একটা ষড়যন্ত্র হবে শয়তানকে সেখআনে থাকতে হবে না? শয়তান এসেছে একজন বুড়োর বেশ ধরে। গায়ে মোটা আলখাল্লা। দেখতে ঠিক কেতাদুরুস্ত দরবেশ!
দরবেশ দরজায় দাঁড়িয়ে…..
: কে আপনি? সবার প্রশ্ন।
: আমার বাড়ি নাজদে!
: এখানে কেন?
: তোমরা যে বিষয়ে পরামর্শ করতে বসেছ তা শুনতে এসেছি। হয়তো আমিও তোমাদের কোন ভালো পরামর্শ দিতে পালবো।
: ভেতরে আসুন, ভেতরে আসুন…..
বিশাল দরবার।
কুরাইশ নেতারা সবাই আছেন দরবারে।
ওতবা, শায়বা, আবু সুফিয়ান, তুয়াইমা, যুবায়ের ইবনে মুতইম, হারেস ইবনে আমের, নজর ইবনে হারেস, আবুল বুখতারি, হাকিম ইবনে হিজাম, আবু জাহেল, ওমাইয়া ইবনে খালফ নেতাদের সঙ্গে চেলাচামুণ্ডের বিশাল বাহিনী তো আছেই।
কী করা যায় বল! গম্ভীর কণ্ঠে একজন বলল। দরবারের একজন বলল
: লোহার শেকল দিয়ে বেধে কোন একটি ঘরে রেখে দাও। তারপর বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দাও। কবি যুহায়ের ও নাবেগাদের যে দশা হয়েছিলো-তারও সেই দশা হবে।
নজদি শায়েখ বলল: না, এটা কোন মত হল না। তাকে কোথাও বেধে রাখলে-যেমনটি তোমরা বলছ-তার সঙ্গিরা এসে তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। তাকে ছিনিয়ে নেবে। তখন তাদের শক্তি ও সাহস বেড়ে যাবে। কাজেই এটা কোন মত নয়। অন্য কিছু ভাব।
একজন বলল: আমরা তাকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দেব। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ারপর কোথায় গেল, কার কাছে গেল-আমাদের ভাববার কিছু নেই। আমি নিস্তার পেলাম-এই যথেষ্ঠ।
নজদি শায়েখ বলল: এটাও কোন মত হল না। তোমরা দেখনা, তার কথা কী মধুময়, যাদু ময় তার প্রতিটি উচ্চারণ! তার কথা মানুষের মনে গিয়ে বিঁধে। তোমরা তাকে তাড়িয়ে দিয়ে বাঁচতে পারবে না। আরবের যে কোন জনবসতিতে যাবে-কথার যাজুতে তাদের বশ করে ফেলবে। তারপর ভক্তদের নিয়ে ফিরে আসবে এই খানে। তারপর তোমাদের তাহ থেকে ছিনিঢে নেবে নেতৃত্ব। কাজেই বাঁচতে হলে অন্য কিছু ভাব।
এবার আবু জেহেল উঠে দাঁড়াল।
শোন! আমার একটি মত আছে। দেখছি তোমরা কেউ ওখানে যাচ্ছ না। কী মত আবুল হেকাম। বলুন!
আমার মত হল, আমরা মক্কার প্রতিটি গোত্র থেকে একজন করে শক্তিশালী দৃঢ়চিত্ত যুবক নিব। তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দিব একটি করে খোলা তরবারি। তারা মুহাম্মদের বাড়িতে যাবে। তারপর সকলে একসঙ্গে হামলা করবে। এক আঘাতেই সব শেষ। আমরা বেঁচে যাবো তার বিপদ থেকে। এভাবে খুন করলে মুহাম্মদের রক্ত সব গোত্রে ছড়িয়ে পড়বে। তখন তার বংশের লোকেরা সবার বিরোদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। বড় জোর রক্তমূল্যৗ দাবী করতে পারবে। সেটা আমরা সবাই মিলে শোধ করে দিব।
নজদি শায়েখ বলল: এবলেছে কথা। এটাই ঠিক। এটাই কর। এর বাইরে আর কোন মত হতে পারে না।
হ্যাঁ , তাই হোক, তাই হোক-বলে দরবার ভেঙ্গে যায়।
দরবারটা বড় ছিল। কথা গোপন ছিলো না। গোপন রাখবার দরকারও ছিল না। মক্কার সবাই তো তাদের দলে।
নবীজির এক খালা কথাটা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান নবীজির কাছে। সব খোলে বলেন তাকে।
কী ভয়ানক কথা-আজ রাতে খুন করা হবে…….
চলবে…..