হিরে মোতিপান্না
সংকলন ও অনুবাদ : ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন
* বেশি বেশি ঈমানদারদের বন্ধু বানাও। কারণ কিয়ামতের সুপারিশ করার সুযোগ থাকবে কেবল ঈমান দীপ্ত মানুষের। -হাসান বসরী রহ.
* নিজের সুখের জন্য কারো উপর জুলুম করে বসো না। নিজের দোষ-ত্রুটি আড়াল করতে কারো প্রতি অবিচার করো না। সবসময় চেষ্টা করবে, মানুষকে কষ্ট না দিয়েই নিজের জীবন যেন সুখী হয়। -আলি তানতাভি রহ.
ইবাদতের মজা:
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন,
‘আমি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করছি। তিনটা জিনিস ত্যাগ করার পরই ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ ও মজা অনুভব করেছিÑ
এক. মানুষকে সন্তুষ্ট করা ছেড়ে দিয়েছি। তারপরই সদা সত্য কথা বলতে সক্ষম হয়েছি।
দুই. দুষ্ট লোকদের সাহচর্য ত্যাগ করেছি। তবেই সৎ ও নেককার লোকদের সোহবত পেয়েছি।
তিন. দুনিয়ার মজা ও স্বাদ ত্যাগ করার পরই পরকালের আসল মজা খুঁজে পেয়েছি।
[-সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১১/৩৪]
নিরাপদ হৃদয়:
যারা নিরাপদ হৃদয়ের মালিক এবং যারা সবচে কম পরচর্চা করে তারাই সর্বোত্তম মানুষ। Ñইয়াস ইবনু মুয়াবিয়া
অজেয় ও অপ্রতিরুদ্ধ:
শায়খ ইবনু তাইমিয়াহ রহ. বলেন,
সত্যাশ্রয়ী হৃদয়সমূহ এবং মানুষের নেক দুআ ঠিক যেন একেকটি অজেয় সেনা ছাউনি, অপ্রতিরুদ্ধ বাহিনী।
দানের স্বাদ :
* বদান্যতার মাঝে যে আনন্দ এবং মানুষের প্রয়োজন মিটানোর মধ্যে যে মজা ও স্বাদ রয়েছে, তা উন্নত ও মহান চরিত্রের ব্যক্তিই শুধু বুঝতে পারেন।
* দান শুধু কাউকে কিছু প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ত্যাগের মধ্যেও দানের মাহাত্ম্য নিহিত থাকে।
যেমন: রাগ প্রশমন করা। অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা।
* মানুষের ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে কথা বলা থেকে নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখা ইত্যাদিও মহত্ত্বের লক্ষণ।
উচ্চাকাক্সক্ষা ও অলসতা:
* উচ্চাকাক্সক্ষা ও অলসতা কখনো একসঙ্গে হতে পারে না। ভালো কিছু করার উচ্চাকাক্সক্ষা থাকলে অলসতা ত্যাগ করতে হবে।
* চেষ্টা করুন, আপনার উচ্চাকাক্সক্ষা যাতে আপনার সম্ভাবনাসমূহকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যায়। আর সতর্ক থাকবেন- অলসতা যেন সেসব সম্ভাবনাকে নিম্নপর্যায়ে নামিয়ে না আনে।
* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করতেন- ‘হে আল্লাহ! অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
বিশেষ আমল:
* কোনো নেয়ামত পেলে, আল্লাহর প্রশংসা করুন।
* রিযিক কখনো কমে গেলে, বেশি বেশি ইস্তিগফার করুন তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
* আর বিপদ আপতিত হলে বেশি বেশি ‘দুআয়ে ইউনুস’ তথা লাইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালিমীন পড়ুন।
অনিশেষ:
সব কিছু অন্যকে দিলে ফুরিয়ে যায়। শেষ হয়ে যায়। তবে ইল্ম কখনো ফুরায় না। ইল্ম বা জ্ঞান এমন আলো, যা অন্যকে দিলে আরো বাড়ে। –
হযরত আলী রা.
অতৃপ্তি:
দুই ধরনের মানুষ সাধারণত কখনো তৃপ্ত হয় না। তাদের পিপাসা মিটে না।
এক. তালেবে ইল্ম তথা জ্ঞান পিপাসু।
দুই. তালেবে মাল তথা অর্থের পিছনে ছুটে চলা মানুষ।
মানুষের বিবেক তিন স্তরের:
* উন্নত বিবেক: চিন্তা-চেতনার কথা বলে।
*মধ্যম বিবেক: ঘটনা নিয়ে কথা বলে।
* ক্ষুদ্র বিবেক: ব্যক্তি পর্যায়ে কথা বলে।
ঈর্ষা ও গায়রত :
* অর্থ-বৈভব, পদ-পদবি কিংবা খ্যাতিতে কেউ আমাদের থেকে এগিয়ে থাকলে আমরা তার প্রতি ঈর্ষা করি। নিজের গায়রত বা আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে তখন।
*অথচ নামাযে প্রথম সারিতে কেউ আগে চলে গেলে, কিংবা পবিত্র কুরআনের হিফজে কেউ এগিয়ে থাকলে তার প্রতি আমরা ঈর্ষা বোধ করি না, তখন আত্মমর্যাদায় লাগে না।
উত্তম সঙ্গ:
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনুল মুবারককে রহ. জিজ্ঞেস করা হলো-
‘নামায পড়া শেষ হলে আপনি আমাদের সঙ্গে বসেন না কেন?’
জবাব দিলেন-
‘আমি তো সাহাবি ও তাবিঈদের সঙ্গে বসি। তাঁদের লেখা ও কথার মাঝে ডুবে থাকি বিমুগ্ধ হয়ে। তোমাদের সঙ্গে থেকে কি করবো? তোমরা তো মানুষের গীবত করো।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম:
* অন্যকে সম্মান করুন। আপনিও সম্মান পাবেন।
* দান-সদকা করুন। আপনার রিযিক বৃদ্ধি পাবে।
* মুচকি হেসে কথা বলুন। পুণ্য লাভে ধন্য হবেন।
* বিনয়াবনত থাকুন। মানুষ আপনাকে উপরে তুলবে।
* অর্থাৎ ‘বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে।’
সুখের রহস্য:
যদি সুখে থাকতে চাও তাহলে:
* যা ছুটে গেছে তার জন্য দুঃখ করো না।
*যা এখনো আসেনি অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য পেরেশান হয়ো না।
*বরং এ জমিন ও আসমানের মালিক তোমার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো।
তিন দুর্ভাগা:
এক. শিকারি কুকুর; নিজে পরিশ্রম করে আর শিকার করে অন্যের জন্য।
দুই. কৃপণ লোক; কষ্ট করে ধন-সম্পদ জমা করে আর ভোগ করে অন্য কেউ।
তিন. গিবত বা পরনিন্দাকারী; পরচর্চা করে আর পরচর্চার কারণে তার পুণ্যগুলো চলে যায় অন্যের আমলনামায়।
অভিজ্ঞতার ঝুলি :
নিজের গোপন কথাগুলো অন্যকে কখনো বলতে নেই।
* হতে পারে সেটা অজানা কোনো গোনাহ।
*একান্তে হয়ে যাওয়া কিছু ভুল বা অনাকাক্সিক্ষত কোনো ত্রুটি…
* অথবা জীবন চলার পথে কোনো অনভিপ্রেত পদস্খলন…
সময়ের স্রোতে জীবন তো আর থেমে থাকে না। এক সময় আপনি নিজেও হয়তো এসব অজানা কথা ভুলে যাবেন। হতে পারে সে জন্য আপনি তওবাও করেছেন। আল্লাহ চাইলে আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু শেয়ার করার কারণে আপনার এসব গোপন কথা অন্যের মনে রয়ে যাবে অক্ষয় অব্যয় হয়ে। তারা এগুলোর স্মৃতি চারণ করবে। যতদিন জীবিত থাকবেন, আপনাকে সময়-সুযোগে স্মরণ করিয়ে দিবে। কেউবা আবার নিজের দোষ-ত্রুটি ঢাকার জন্য আপনার গোপন কথা বর্ণনা করবে।