খুশির পাখা মেলে এলো ঈদ- যিয়াদ মুহাম্মদ ফাতিহ

খুশির পাখা মেলে এলো ঈদ- যিয়াদ মুহাম্মদ ফাতিহ

খুশির পাখা মেলে
এলো ঈদ
যিয়াদ মুহাম্মদ ফাতিহ
এসো হারানো দিনের গল্প শুনি। শুনি হাসি-আনন্দ-উচ্ছ্বাস পাখা মেলে আকাশে উড়ে যাওয়ার গল্প। মন খারাপ হবে তোমাদের। আবার নাও হতে পারে।
কারণ তোমরা কী বুঝবে, সেই হারানো দিনগুলো কত সুন্দর ছিল?
কত মোহ-আবেগ বাসা বাঁধতো হৃদয়ে হৃদয়ে!
আগের ঈদ কত সুন্দর ছিল!
ঈদে ছিল উচ্ছ্বাস- প্রাণ খোলা হাসি!
সেই ঈদ এখন আর নেই! নেই সেই ঈদের ঝলক। আঁধার ঘেরা গ্রামেও হাসে না ঈদের চাঁদ। কেমন সব যেন এখন কৃত্তিম-রোবটের মতো।
আগেকার মতো নেই চাঁদ দেখার মিছিল। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন চাঁদ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। সন্ধায় ইফতার করে মাগরিবের নামাজ পড়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে খুঁজতাম চাঁদ। কোথায় চাঁদ! কোথায় চাঁদ! কে দেখা পাবে সবার আগে এই এক অসম প্রতিযোগিতা। চাঁদ দেখা মাত্র ওই যে ওই যে বলে একসুরে চিৎকার। খুশির চিৎকার। যেন চাঁদ নয়-আকাশ থেকে সবার চোখে-মুখে ছুটে আসতো খুশির ফোয়ারা।
কিন্তু এখন আর নেই। এখন চাঁদ দেখা হয় টেলিভিশনের পর্দায়। খবরের কণ্ঠে। ফেইসবুকে আটকে থাকা চিন্তা! আনন্দ-উচ্ছ্বাস যেন একাকী মোবাইলের সাথে।
আমরা দেখেছি সেই পুরোনো সুন্দর দিনগুলো। আর এখন দেখছি তোমাদের কাল-রোবটের জীবন। ফ্ল্যাট নামক চার দেয়ালে বন্দি আমাদের তরুণ প্রজন্ম।
তোমাদের কাছে এখন গুরুত্ব নেই বায়না ধরার! যারা গরিব-অসহায় তারা কিছুই পায় না। ঈদে নেই জামা-জুতো। ঘরে নেই ফিরনি-পায়েস। তবে তোমরা যারা মধ্যবিত্ত বা একটু পয়সাওয়ালা, তাদের তো বায়না ধরতে হয় না। না চাইতেই জামা-জুতো সব চলে আসে। আমাদের সময় তা ছিল না। অভাব ছিল। ঈদে একটি নতুন জামা-জুতো পাবো এই আশা করতে হতো অনেক দিন। আর যখন আব্বা জামা-জুতো কিনে দিতেন তখন চোখে-মুখে আনেন্দর ঢেউ খেলে যেতো। ফিরনি পায়েস পেলে তো কথায় নেই।
গরিবের ঘরে একটু আধটু সেমাই পিঠা দিয়ে আসতাম- এতেই মন ভরে যেত তৃপ্তিতে। পুরোনো জামাকাপড়, কিছু নগদ টাকা গরিবের অসহায় ছেলেটির হাতে তুলে দিতে পারলে পূর্ণতা পেতো ঈদের আনন্দ।

চাঁদ দেখা নেই, বায়না নেই, নতুন জামার তৃপ্তিময় ঘ্রাণ নেই। তাহলে কী করে ঈদ হবে বলো? আমাদের মাথা ঢুকে গেছে মোবাইলে! হাই! হ্যালো! তাহলে ঈদের আনন্দ ছড়াবে কী করে?
আমরা এখন পড়ি না, গল্প-ছড়া কবিতা, ফিচার-তথা পত্র-পত্রিকার প্রতি নেই কোনো আগ্রহ। তাহলে কী করে জানবো ঈদের আনন্দের একাল সেকাল!
আমরা গরিবদের যাকাত দেই ফেতরা দেই! কিন্তু ভালোবাসার নজর দেই না। তাহলে গরিবের ঘরে ঈদ আসবে কীভাবে?
আর ধনী গরিব সবার ঘরে যদি আনন্দ ছড়িয়ে না যায় তবে তা কি ঈদ হয়? নিজে নিজে আনন্দ করার মাঝে কোনো সুখ নেই। সুখ হলো অন্যকে খুশি করতে পারা।
যদি সবার মাঝে হাসি-আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারো তবেই হবে প্রকৃত ঈদ। তবেই নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারবে আনন্দের পালকিতে।
খুশির পাখা মেলে ঈদ আসে-ঈদ আসে আনন্দের পালকিতে চড়ে। এক মাস সিয়াম সাধনা-ত্যাগের বিনিময়ের পুরস্কার নিয়ে আসে ঈদ। ঈদ তো আসে মহান রবের মহা সুসংবাদ নিয়ে। ক্ষমার অপূর্ব ঘোষণা নিয়ে। তাই ঈদকে বরণ করতে হবে-পবিত্র হয়ে- হাসি খুশি মনে। সবখানে সব ঘরে সব হৃদয়ে খুশির ছোঁয়া ছড়িয়ে দিয়ে।
আমাদের ঈদ। উৎসবের ঈদ। প্রাণ উজাড় করে খুশি হওয়ার দিন। আল্লাহর নিকট হতে পুরস্কার গ্রহণের দিন। এই ঈদ মনকে রাঙানোর! এই ঈদ ঈমানকে জাগানোর। এই ঈদ প্রেরণার। নিজের নীতি-আদর্শ স্বকীয়তাকে আরো শাণিত করার। আমাদের ঈদকে আমরাই রাঙাবো, করে তুলবো উৎসবমুখর, আনন্দময়। আমরা আনন্দ করবো, তবে আমাদের আনন্দ হবে নির্মল, স্বচ্ছ-সুন্দর নির্দোষ। কোনো ভিনদেশি অনৈতিক সংস্কৃতি যেন আমাদের উৎসব-রাজ্যে মিশে যেতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদেরকেই।
ইসলাম-সত্য, সুন্দরের প্রেরণা নিয়ে জেগে উঠতে হবে আমাদের। আবদ্ধ হতে হবে একতার বন্ধনে। অসহায় গরিব-দুখিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। চাঁদ যেমন সবার জন্য আকাশে ভেসে ওঠে, ধনী-গরিব তফাত না করে সবাইকে আলো দেয়, মিষ্টি আলো, স্নিগ্ধ পরশে ছুঁয়ে যায় হৃদয়- তেমনি আমরাও ছুঁয়ে দেবো একে অপরের হৃদয়। ভালোবাসার সামিয়ানায় গড়ে উঠবে সমাজ। ফিরে আসবে সোনালী দিন, হেসে উঠবে শিশুরা। অমন দিন যদি আসে, ঈদ তবে ঈদ হবে। ঈদ হবে আমাদের।

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য