আব্বা আমাদের অনুভবে

আব্বা আমাদের অনুভবে

আমাদের ছোটবেলায় আব্বাকে অনেক রাগী দেখতাম। আব্বা রেগে গেলে আমাদের পুরো বাড়িতে যেন থমথমে অবস্থা। কখনো খেতে বসে দস্তরখানটা বিছালাম না অথবা নামাজে তাকবিরে উ’লা পেলাম না, সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইয়াসিন, ওয়াকিয়া পড়লাম না, তবে সেদিন তো আব্বা রাগবেন, রেগে থাকবেন।

কখনো কোনও কারণে আব্বা রেগে গেলে আমরা অপেক্ষার করতাম, আম্মা কখন আব্বার মুখে এক খিলি পান তুলে দেবেন। আর আব্বার সব রাগ ধুয়েমুছে যাবে। পান খাওয়ার পর কেমন করে যেন কোনও এক জাদুর ছড়িতে আব্বার সব রাগ পানি হয়ে যেতো। তখন আমরা একেবারে যাচ্ছে তাই হই-হুল্লোড় করে বেড়াতাম সারাবাড়িতে।

ছেলেবেলায় আব্বা পান চিবিয়ে থিতু করে আমার মুখে তুলে দিতেন। আব্বার মুখ থেকে তখন এক ধরনের ঘ্রাণ বের হতো। আব্বার মুখে চাবানো পান আমার মুখে নিয়ে খাওয়ার মুহূর্তটা আমার জীবনের পরম সুখস্মুতিগুলোর একটি। যা আমি বয়ে বেড়াবো আজীবন। হয়তো আমার সঙ্গে নিয়ে যাব জান্নাতেও।

আমাদের ছেলেবেলা আর এখন, আব্বার রাগ, রেগে যাওয়া স্বর, কিছুটা নরম হয়েছে, তবে অনেকটাই থেকে গেছে আগের মতো। এখনো আমরা সাত ভাই-বোন আব্বাকে ভয় করি আগের মতোই। কোনও কিছু করার সময় সবার আগে মাথায় এ ভাবনাটাই আসে, ‘আব্বার সামনে এর জবাবদিহীতা করতে পারবো তো! অথবা আব্বাকে একটা যৌক্তিক কারণ দাঁড় করিয়ে দেখাতে পারবো তো।’

আব্বাকে এক সময় অনেক রাগী মনে হলেও এখন বুঝি-আব্বা উপরে যতটা রাগী, ভেতরে ততটাই দিলখোলা। আসলে আব্বার রাগ, রাগ মিশানো শাসনগুলোই আমার-আমাদের জীবনের চলার পথে সঠিক-কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে তুলেছে। এখন তো আমাদের ভাই-বোনদের জীবনের সব মুহূর্ত বা কাজের আগে আব্বাকে নিয়ে ভাবার একটা অভ্যেস হয়ে গেছে। আব্বা যেন আমাদের অনুভবের সঙ্গে মিশে গেছেন।

আব্বার ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘ হোক।

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment