বিশ্বজয়ের গল্প

বিশ্বজয়ের গল্প

 

‘যারা বিশ্বজয় করে তারা দেখতে কেমন?  তারা কি আমাদের থেকে আলাদা?’
‘না, বাবা। তারা আমাদেরই মত সাধারণ মানুষ। ঠিক তোমার মত।’
গায়ে জন্ম মাহফুজের। গায়েই বেড়ে ওঠে। ছোট থেকেই কৌতূহলী আর রহস্যময় ছেলে। সবকিছু নিয়েই কৌতূহল তার। বাবার মুখে বহুবার সে বিশ্বজয়ের গল্প শুনেছে। শুনেছে তার মত বহু হাফেজের কথা, যারা কেরআন প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বে সুনাম ছড়িয়েছে। তাই মাহফুজের কৌতূহল এখন বিশ্বজয়ীদের নিয়ে।

কৌতূহল হয়ে একদিন বাবাকে নানান প্রশ্ন করে তাদের বিষয়ে। সে ভাবতে থাকে তাদের কথা। তাদের বিশ্বজয়ের কথা। মনে মনে ইচ্ছে করে সেও বিশ্বজয় করবে। আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা দেবে। কিন্তু সে যে গায়ের ছেলে!  তার দ্বারা কী সম্ভব এতদূর যাওয়া!  কখনো তো সে শহরেও যায়নি, বিদেশ তো দূরের কথা। কিন্তু মাহফুজের কচি মনে গেঁথে যায় বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। সে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
বাবাকে একদিন তার ইচ্ছার কথা জানায়। বাবা অবাক হয়নি তার কথায়। বরং তিনি তো এমনটিই চেয়েছিলেন। তিনি তাকে সাহস জোগান। তার সঙ্গ দেন। মাহফুজের বাবা তাকে সিলেট শহরের একটি নামিদামি মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন।
বয়স তখন তার দশ কিংবা এগারো বছর । কিন্তু ছোট্ মাহফুজ তো গায়ের ছেলে। সেখানে থাকতেই অভ্যস্ত। তাই তার মন বসল না।  শহরের দূষিত বাতাসে থাকতে তার কষ্ট হচ্ছিল। তবে সে অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে মানিয়ে নেয়। কারণ সে তো বিশ্বজয় করবে। আর এজন্য তো সহ্য করতে হবে বহু কষ্ট। পাড়ি দিতে হবে দূর্গম পথ। করতে হবে অনেক মেহনত। কেননা সে বড়দের থেকে শুনেছে,  ‘সফলতার পথ সহজ হয় না, খুবই কণ্টকাকীর্ণ।’
মাহফুজের দৃঢ় সংকল্প আর দিনরাত প্রচেষ্টায় তাকে বেশিদিন কষ্ট করতে হয়নি। তার স্বপ্নগুলো খুব অল্পসময়ের মধ্যে সফলতার ডানা ঝাপটাতে থাকে। বিভাগীয় ছোট ছোট কোরআন প্রতিযোগিতায় সে অংশ নেয়। পেয়ে যায় চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার। তার তেলাওয়াতে বিচারক শ্রোতা সকলে মুগ্ধ হয়।
একটা সময় মাহফুজ জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। কিন্তু সেখানকার নতুন পরিবেশ মাহফুজ বুঝে উঠতে পারেনি। তাই সাময়িক সময়ের জন্য সে ব্যর্থ হয়। এতে তার কচি মনে আঘাত লাগলেও দমে যায়নি সে। তার বিশ্বজয়ের স্পৃহা তাকে দমতে দেয়নি। সে নিজেকে আবার সামলে নেয়। ত্রুটিগুলো খুঁজে তা সংশোধনের চেষ্টা করে।

২০১৫ সাল। মাহফুজের সামনে চলে আসে বিরাট সুযোগ। তার স্বপ্ন পূরণের ফুরসাত। আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। মাহফুজ সুযোগটি হাতছাড়া করল না। সেও অংশগ্রহণ করল সেখানে। এইবার তাকে আর ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হল না। বাছাইকৃতদের তালিকায় তার নাম চলে আসে।
মাহফুজের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ লাভ করার অপেক্ষায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে একাই সৌদিআরব যায়। চোখে-মুখে তার দৃঢ়তার দীপ্তি। অদম্য সাহস আর সুনিশ্চিত বিজয়ের প্রত্যয় নিয়ে একেরপর এক লড়াই করতে থাকে। একপর্যায়ে লাল সবুজের প্রতিনিধি হয়ে বিজয়কেতন ছিনিয়ে আনে মাহফুজ। ষাটটি দেশকে একাই পিছনে ফেলে আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম হয়, গায়ের এই ছেলেটি। পূরণ হয় তার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন।

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য