সুমনের দোয়া

সুমনের দোয়া

সকাল বেলায় সুমন ছঁবি আঁকছিল। আজ শুক্রবার। প্রতি শুক্রবার সুমন একটি করে ছবি আঁকে। এটা তার শখ। অন্যান্য দিন পড়াশুনার চাপে ছবি আঁকতে পারে না। আজ সুমন তার বাবার ছবি আঁকতে চেষ্টা করছে। সুমন তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে। সুমন একমনে ছবি একেই যাচ্ছে। দুইবার কলিংবেল বাজল। সুমন শুনতে পায়নি। তিনবারের সময় সুমন শুনতে পেয়ে দরজা খুলে দিল।

‘তোমার বাবা বাড়িতে আছেন?’ অচেনা লোকটি প্রশ্ন করল। ‘জী আছেন। আপনি ভিতরে এসে বসুন আমি ডেকে দিচ্ছি।’ লোকটিকে বসিয়ে সুমন ভেতরে তার বাবাকে ডেকে আনতে গেল। সুমন তার বাবাকে ডেকে এনে আবার তার ছবি আঁকার কাজে মন দিল। ছবি আঁকা প্রায় শেষ এমন সময় সুমন শুনতে পেল অচেনা লোকটি তার বাবাকে বলছে, ‘আপনার উপহার আমি এনেছি। আপনি শুধু আমার ফাইলটা কালকের মধ্যেই সাইন করে দিন।’

একথা কানে আসতেই সুমন লোকটির দিকে তাকাল। সুমন দেখতে পেল লোকটি একটা টাকার বান্ডিল তার বাবার নিকট এগিয়ে দিল এবং তার বাবা হাসিমুখে সেটি নিয়ে লুকিয়ে রাখল। সুমনের মনে চিন্তা আসল যে তার বাবা ঘুষ খায়।

‘ছি ছি ছি, আমার বাবা ঘুষ খায়। আমি বাবাকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে কত গর্ব করি। কিন্তু এটা আমি কী দেখলাম। আমার বাবা ঘুষখোর’ কথাগুলো সুমন নিজে নিজে ফিসফিসিয়ে বলল। এ দৃশ্য দেখার পর থেকে সুমনের মন খুব খারাপ।

দুপুরে গোসলের পর সুমন তার বাবার সাথে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গেল। তাদের মসজিদের ঈমাম মাহফুজুর রহমান আজ ঘুষ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করে বললেন,

‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না।’ এরপর তিনি ঘুষের আরো কিছু ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে একটি হাদিস পেশ করলেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেছেন, ঘুষ গ্রহণকারী এবং ঘুষ প্রদানকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লানত। (বুখারী, মুসলিম)

ঈমামের এসব বক্তব্য শুনে সুমনের বাবার জন্য চিন্তা হতে লাগল। আমার বাবার উপর আল্লাহর লানত নেমে আসবে। তিনি কী তাহলে বেহেশতে যেতে পারবে না? নামাজ শেষে সুমন তার বাবার জন্য দোয়া করল। ‘আল্লাহ আমার বাবাকে তুমি মাফ করে দাও তিনি যেন তাঁর ভুল বুঝতে পারে। তিনি যেন এই মন্দ পথ থেকে ফিরে আসেন। তিনি যেন আর ঘুষ না খায়। আমিন।’

পরেরদিন শেষরাতের দিকে সুমনের ঘুম ভাঙল তার মায়ের চেঁচামেঁচি শুনে। বিছানা ছেড়ে মায়ের রুমে প্রবেশ করে দেখল তার মা তার বাবাকে পানি ঢালছে। তার বাবা শুধু বলছে, ‘আমি পুড়ে গেলাম, জ্বলে গেলাম, মরে গেলাম। আমাকে পানি ঢাল।’ কিছুক্ষণ পর তার বাবার অস্থিরতা কেটে গেলে তিনি বললেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম, মারা গেছি। দু’জন ফেরেশতা এসে আমাকে আগুন দিয়ে ঘেরাও করল। এরপর ঘুষ খাওয়ার কারণে আমার গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিল।

: বাবা তুমি ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দাও।

: হ্যাঁ বাবা, আমি ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দিব। আর যাদের কাছে থেকে ঘুষ নিয়েছিলাম তাদের সকলের কাছে তাদের টাকা ফেরত দিয়ে মাফ চেয়ে নিব।

‘এইতো আমার লক্ষি বাবা’ এই বলে সুমন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আর মনে-মনে আল্লাহ তাআলাকে ধন্যবাদ জানায় তার দোয়া কবুল করার জন্য।

Share on facebook
ফেইসবুক
Share on twitter
টুইটার

Leave a Comment

অন্যান্য